রাতের হিমেল হাওয়া আর ভোরে ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। সামর্থ্য অনুযায়ী তীব্র শীত আসার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ঈশ্বরদীতে লেপ-তোশক কিনতে দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। কেউ কেউ আবার পুরাতন লেপ-তোশকগুলো সংস্কার করে নিচ্ছেন। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন লেপ-তোশক তৈরির কারিগররা। কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত।
উপজেলার আলহাজ্ব মোড়, দাশুড়িয়া, নতুনহাট, জয়নগর, আওতাপাড়া বাজার সহ বিভিন্ন এলাকায় লেপ তোশকের দোকান গুলো ঘুরে কর্মব্যস্ততার এমন চিত্র দেখা গেছে।
আলহাজ্ব মোড় তুলাঘরে লেপ নিতে আসা ক্রেতা জাহিদুল ইসলাম জানান, এবার শীতের শুরুতেই রাতে ঠাণ্ডার দাপট দেখা দিয়েছে। তীব্র শীত শুরু হলে তখন দোকানগুলোতে বেশি চাপ থাকে, তাই আগেভাগেই একটি পুরাতন লেপের তুলা বদলিয়ে নতুন কাপড় দিয়ে সেলাই করে নিচ্ছেন। সাথে একটি নতুন লেপও কিনেছেন। তবে গতবারের চেয়ে তুলা ও কাপড়ের দাম অনেকটা বেশি হওয়ার লেপের দাম অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আলহাজ্ব মোড়ে জীবন এন্টারপ্রাইজ তুলাঘরের মালিক মোস্তাফা কামাল বলেন, গতবারের চেয়ে এবারে তুলা ও কাপড় সহ সব উপকরণের দাম কিছুটা বেড়েছে। এতে লেপ-তোশক তৈরির খরচও বেড়েছে। শীতের শুরুতেই কাজের চাপ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জয়নগরের মেসার্স সিয়াম ট্রেডার্স তুলা ঘরের সত্বাধিকারী আব্দুল বারী জানান, গড়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি লেপ-তোশক তৈরি করছেন তিনি। প্রকারভেদে লেপ ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা, তোশক ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা এবং জাজিম ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তার দোকানে আরও ৩ জন কারিগর কাজ করছেন। একজন কারিগর দিনে ৩-৪ টি লেপ তৈরী করে থাকেন বলে তিনি জানান।
লেপ-তোশকের এসব দোকান মালিকরা জানান, বছরের প্রায় আট মাস তেমন বেশি কাজ হয় না। শীতের ৪ মাসের আয়-রোজগার দিয়ে বাকি আট মাস চলতে হয়। তাই দিন রাতে কাজ করতে হয় শীতের মৌসুমে। তবে উপকরণের দাম বাড়ায় লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে কর্মচারীরা জানান, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি থাকলেও মজুরী বাড়ানো হয় নি তাদের।
এদিকে শীত নিবারণের জন্য লেপ তোষক কেনার সামর্থ্য না থাকায় চোখেমুখে চিন্তার ছাপ দেখা দিয়েছে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছিন্নমুল ও অসহায় মানুষের। ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে রাত কাটানো রহিম মিয়া বলেন, সময়মতো তিনবেলা খাওয়ার জোটে না আবার শীতবস্ত্র কিনবো কি করে। বিভিন্ন সংগঠন ও সরকারী প্রশাসন শীতবস্ত্র দিলে সেটা দিয়েই শীত পার করবো। তিনি আরও বলেন, বিত্তবান ও প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ তারা যেন শীতের মাঝামাঝি বা শেষ সময়ে শীতবস্ত্র না দিয়ে শীতের শুরুতে এসব বস্ত্র দেয় তাহলে আমাদের কষ্ট অনেকটা কম হবে।