২৮ নভেম্বর ঈশ্বরদীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ইতিমধ্যে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়েছেন। পাকশীতে প্রতিদ্বন্দ্বী কোন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা না দেওয়ায় এককভাবে সাইফুজ্জামান পিন্টু ও মুলাডুলি এবং দাশুড়িয়াতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় আব্দুল খালেক মালিথা ও নুরুল ইসলাম বকুল সরদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন ঘিরে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন ইউনিয়নে বয়ে চলছে ভোটের গরম হাওয়া। বাকি ৪ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী সহ ৭ ইউনিয়নের মেম্বার প্রার্থীদদের পদচারণায় মুখর গ্রামীণজনপদ।
উপজেলার এই তিনটি ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও বাকি ৪ টি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীগন মনোনয়ন প্রত্যাহার না করায় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় আগামী ২৮ তারিখে ইভিএম ও সিল -ব্যালটের ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন সাধারন জনগণ। বাকি এ চারটি ইউনিয়নগুলো হলো সাড়া, সলিমপুর, সাহাপুর ও লক্ষীকুন্ডা। ইতিমধ্যে আসনগুলো দখলে নিতে মরিয়া আ:লীগ প্রার্থীরা। তবে প্রচার প্রচারনায় পিছিয়ে নেই স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
সরজমিনে ইউনিয়ন গুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রতীক বরাদ্দ হওয়ায় প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ইউনিয়নগুলোর প্রতিটি গ্রামে, পাড়ায়-মহল্লায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নানা রকমভাবে চালাচ্ছেন তাদের গণসংযোগ।
প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুশল বিনিময়ও করছেন। বিভিন্ন শ্লোগানে চলছে মিছিল ও মোটরসাইকেল শোডাউন। পোস্টার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছেন অলিগলি। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে মাইকিং।
চেয়ারম্যান প্রার্থীরা তাদের ভোট ব্যাংক বাড়াতে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে এমনকি নীরবে কাজ করে চলেছেন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে নির্বাচনী সভা। ঘরোয়া বৈঠকসহ মোড়ে মোড়ে চা-স্টলে ভিড় জমাচ্ছেন। এলাকার সব চা-স্টলগুলোতে এখন জমজমাট বেচা-বিক্রি চলছে।
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগেই চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এলাকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নসহ দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। প্রার্থীরা সাধারণ জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন উন্নয়নমুখী নানা ধরণের আশ্বাস ও আশার বাণী।
নির্বাচনের কথা শুনে সাধারণ ভোটাররা বিভিন্ন চায়ের দোকানে দিচ্ছেন নির্বাচনী আড্ডা। হাটে-বাজারে রাস্তা-ঘাটে চায়ের দোকানে প্রার্থীদের নিয়ে চলছে আলোচনা-সমলোচলার ঝড়। নির্বাচন নিয়ে চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ।
নির্বাচনকে ঘিরে বেশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে সাহাপুর ও লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে। সাহাপুরে আকাল সরদারের নৌকাকে ডুবাতে তৎপর বিদ্রোহী প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইমলাক হোসেন বাবু। তবে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে মরিয়া আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা।
এদিকে লক্ষীকুন্ডায় বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আনিসুর রহমান শরীফের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আনিস মোল্লা। নিজ নিজ জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী মাঠ দখলের চেষ্টায় রয়েছেন এই দুই প্রার্থী। মাঠ দখল করতে গিয়ে হামলা ও নির্বাচনী অফিস ভাঙ্গচুরের মতো ঘটনাও ঘটেছে ইউনিয়নটিতে।
তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকলেও তেমন একটা উত্তাপ নেই সাড়া ও সলিমপুর ইউনিয়নে। সাড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী রানা সরদারের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জুয়েল চৌধুরী। জয়ের প্রত্যাশায় দুইজনই ২৮ তারিখের সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
সলিমপুরে বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত তিনবারের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান। উত্তাপ বিহিন নিজ নিজ প্রচারনা ও গনসংযোগে ব্যাস্ত রয়েছেন এ দুই প্রার্থী।
অন্য তিনটি ইউনিয়নের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা চেয়ারম্যান নির্বাচিত না হয়ে সিল- ব্যালটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে পারবে বলে আনন্দিত স্থানীয় জনসাধারণ । তবে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ভোটাররা চায় উৎসবমুখর ও ভয়-ভীতিহীন পরিবেশ। যাতে তারা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে এটাই ভোটারদের দাবি।