শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

‘একটি জনপদ ও মুলধারার সংবাদকর্মী’

নিজস্ব প্রতিবেদক / ২৩৮ বার পঠিত
আপডেট : সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২২, ৯:৩৯ অপরাহ্ণ

আলাউদ্দিন আহমেদ:- প্রায় চার লাখ জনসংখ্যার একটি উপজেলা ঈশ্বরদী । আমাদের প্রিয় জন্মস্থান প্রাণের জনপদ উত্তরাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এতে কোন সন্দেহ নেই । কি নেই এখানে আছে দেশের আখ গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান কার্যালয় , আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র , ডাল গবেষণা কেন্দ্র , আছে বিমানবন্দর ( যদিও এখন বন্ধ ) , ইপিজেডসহ অনেকগুলো অটোরাইচ মিল , বহুসংখ্যক সাধারন রাইচ মিল , অনেক ছোটবড় কারখানা ।

সবচেয়ে আলোচিত রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে । এটাকে ঘিরে পাকশী ইউনিয়নের আমূল পরিবর্তন হচ্ছে । সবমিলিয়ে মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে , অর্থনৈতিক কর্মচঞ্চলতায় সারাদিনই ব্যস্ত থাকে ঈশ্বরদী উপজেলার মানুষ ।

শিল্পের বাইরেও এই উপজেলায় গর্ব করার মত কৃষি উৎপাদন রয়েছে । শাক – সব্জী , ফলমূল প্রতি মৌসুমে রাজধানী ঢাকায় যায় ট্রাকভরে । লিচুর সময় বাইরে থেকে আগত পাইকারি ব্যবসায়ীদের পদভারে মুখরিত থাকে গ্রামগুলো । সময়টি যেন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে । আত্মীয় স্বজনের আনাগোনা বাড়ে গ্রামে । উপরের সামান্য বর্ননায় আমাদের এই প্রিয় জনপদের গুরুত্ব কিছুটা তুলে ধরলাম এই কারনে যে , একটি এলাকার মানুষের কর্মচঞ্চলতা যত বাড়বে ততই বাড়বে সংবাদকর্মীদের দায়িত্ব ।

কর্মজীবী মানুষের গতির সাথে অন্যান্য সেক্টরের মত মিডিয়া জগতও গতিশীল হবে এটাই স্বাভাবিক । এখন তো সেই আগের মত বাইসাইকেল নিয়ে মেঠোপথ ধরে ছুটতে হয়না গ্রাম থেকে গ্রামে । গ্রামে – গ্রামে পাকা রাস্তা যদিও এখন অনেক রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে । তারপরও বাহন বেড়েছে । সিএনজি , অটোরিক্সা সবই হাতের কাছে পাওয়া যায় । সুতরাং মিডিয়াকর্মীদের এখন চলাচল করতে কোন অসুবিধা হয়না । এছাড়াও অধিকাংশের হাতে হাতে মটরসাইকেল , দামি মোবাইল তো আছেই । সহজ হয়ে গেছে তথ্য সংগ্রহ ।

ইউনিয়ন পর্যায়ে ভাল নির্ভরযোগ্য সোর্স থাকলে শহরে বসেই খবর পাওয়া কঠিন কিছু নয় । ফলে সাধারন নিউজের জন্য ঘটনাস্থলে যেতে হয়না । তবে বিশেষ প্রতিবেদন তৈরিতে অবশ্যই সরেজমিন পর্যবেক্ষন করলে তা পাঠকদের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা সহজ হবে । যদিও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এখন হারাতে বসেছে । নেতাদের নিউজ , থানার নিউজে আমরা ব্যস্ত সময় পার করি অনেকে । ফলে শেকড়ের খবর তুলে আনার যে সাংবাদিকতা তা থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ছি ।

নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত এই ধারাটি বেশ সক্রীয় ছিল । সাংবাদিকতায় মূলধারা একটি কথা প্রচলিত আছে । কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা , নীতি – আদর্শ আর সততার পেশাদারিত্ব না থাকলে মূলধারা দাবি করা কি আদৌ উচিত ? একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যিনি যোদ্ধা ছিলেন ; কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি জোতদার , দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠলেন তাহলে কি আমরা তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা বলতে পারি- ? তিনি তো মূল চেতনা থেকেই সরে গেছেন । সুতরাং তাকে সংশ্লিষ্ট তালিকা থেকেই বাদ দেয়া উচিত । কিন্তু যখন মুল জায়গায় পচন ধরে তখন অন্য সেক্টরগুলোও নষ্ট হয়ে যায় । একই সাথে মুলধারার সাংবাদিকতাও সেই ধরনের । মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর সততার পেশাদারিত্ব ছাড়া সেটা দাবি করা ঠিকনা ।

আমাদের দেশের অর্থনীতি জনকল্যাণমুখি করতে মূল ভূমিকা রাখবেন তো রাজনীতিবিদরা । অর্থাৎ সব সমস্যার সমাধানে রাজনৈতিক নেতাদের সততার সাথে সঠিক ভূমিকার বিকল্প নেই । কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দুর্নীতি বন্ধ করতে অনেক কঠিন ভূমিকা রেখেছিলেন । সপরিবারে তাঁকে হত্যার পর খুনিরা আবার সর্বত্র বিশৃংখলা তৈরি করে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থায় গোঁজামিল পদ্ধতি চালু করে । দীর্ঘদিন সেই ধারা চলছে ।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবারো অপকর্মকারীদের লাগামটানার অভিযান পরিচালনা করছেন । নিজের দলের কেউ অপরাধ করলেও তাকে ছাড় দিচ্ছেননা । সম্প্রতি এ ধরনের অনেকগুলো উদাহরণ তৈরি হয়েছে । এটা ভাল দিক । রাজধানী থেকে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন অপকর্মে যারা জড়িত , শতশত কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে , দেশে আয়েশি জীবনযাপন করছে , সেকেন্ড হোম বানিয়ে রেখেছে বিদেশে তারা কিন্তু মিডিয়া সেক্টরকেও বিতর্কিত করতে অনেক সংবাদকর্মীকে কিনে ফেলছে । একটা শ্রেণী তৈরি হয়ে গেছে । এরা সুবিধাবাদী শ্রেনী । এরা দালালি ও তোষামোদি করে অপকর্মকারীদের সহায়তা করে চলেছে ।

এতসব প্রতিকূলতার মধ্যেও যারা মুলধারার সাংবাদিকতাকে ধরে রেখে কাজ করার চেষ্টা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ওই সুবিধাভোগীরা নানান কায়দায় অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের নীলনকশা প্রনয়ন করতেও দ্বিধা করছেনা । সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শিকার হয়ে কারাভোগ করছেন । প্রকৃত তদন্ত হলে দেখা যাবে এসবের পিছনে ওই সুবিধাভোগী সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে ।

মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সংবাদকর্মীদের উল্লেখিত বিষয়গুলো মাথায় রেখেই কাজ করতে হয় । এই কাজটি একেবারে সহজ নয় । সিন্ডিকেট ভাঙ্গার জন্য যে মনোবল ও মুলধারার মানসিকতা থাকা দরকার সেটা কতটুকু আমরা ধারন করি সেটা ভাববার বিষয় । আর্থিক সুবিধা ‘ এখন একটি প্রভাবশালী ব্যবস্থায় রূপ নিয়েছে । এখান থেকে বের হতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আলো থেকে বঞ্চিত হবে । সাংবাদিকতা ভিন্ন ধরনের পেশা । এখানে আর্থিক লাভের চেয়ে দায়িত্বের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ । সেই দায়িত্বটি কেউ আমার আপনার কাঁধে তুলে দেয়নি । নিজেই আমরা নিয়েছি।

সুতরাং এই পরিচয়ের ভাল – মন্দের দায়িত্বও সংবাদকর্মীকেই নিতে হবে , অন্য কেউ নেবেনা । নতুন কোন সংবাদপত্রের অনুমোদন মানেই বিরাট এক দায়িত্ব পালনের জন্য নিজেকে নিবেদিত করা । এই দায়িত্বটি পালনের জন্য ‘ মুলধারার মানসিকতা ‘ ধারন করতে পারলে নিশ্চয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে সাধারন মানুষ , সমাজ , দেশ উপকৃত হবে । আমাদের চলমান জীবন থেকে শিক্ষা আহরণ করেই মুল শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে । তাহলেই লেখা সহজ হবে , সমস্যার জায়গাগুলো বুঝতে সহজ হবে , সর্বোপরি সংবাদপত্র প্রকাশের উদ্দেশ্যও সফল হবে ।

 

(লেখক : গণমাধ্যমকর্মী ও সাবেক সভাপতি, ঈশ্বরদী প্রেসক্লাব)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!