সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার হাওরাঞ্চলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা চালিয়ে চেঙ্গেরখাল নদীর বিশাল ক্যানেল অতিক্রম করে শিক্ষালয়ে যাতায়াত করে। প্রতিটি নৌকায় ২০-২২ জন করে শিক্ষার্থী উঠতে হয় দল বেঁধে। আর নৌকায় মাঝি-মাল্লা হিসেবে বৈঠা হাতেও শিক্ষার্থীরা শিক্ষালয়ে যায়।
গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দীরগাঁও, তোয়াকুল ও লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের চেঙ্গেরখাল নদীর পাশে প্রতিষ্ঠিত পূর্ব তোয়াকুল উচ্চবিদ্যালয়,জলুরমুখ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়,জলুরমুখ আবাদী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,জলুরমুখ নমসুদ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরো বেশকটি শিক্ষা প্রতিষ্টান। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ক্যানেল পারাপার হয়ে যাতায়াতে নৌকাই এখন একমাত্র ভরসা। বর্ষার সময় নৌকা উল্টে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। এছাড়া প্রতিনিয়তই থাকে প্রাণহানির আশঙ্কা। এসব উপেক্ষা করেই যুগ যুগ ধরে জ্ঞানের আলো সঞ্চয় করে যাচ্ছে গোয়াইনঘাটের হাওর এলাকার এসব শিশু। বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নানা আশঙ্কার মধ্য দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের প্রায় সাড়ে ৬ মাসই বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করে। কখনও কখনও ঢেউয়ের কারণে নৌকা উল্টে যাওয়ার শঙ্কার সঙ্গে জীবন হারানোর ভয় তো আছেই। তবু ঝুঁকি নিয়েই তারা পৌঁছে শিক্ষাঙ্গনে। এ বিষয়ে চলিতাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোজিনা, মুন্নি, আসলাম ও ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী রেজোয়ান ও আসিফ জানায়, প্রতিদিন সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রথম প্রস্তুতি নৌকা আর বৈঠার খোঁজ। এরপর স্কুলের নির্ধারিত পোশাক পরে বই-খাতা নিয়ে নৌকায় ভেসে বিদ্যালয়ে যাই। মাঝি পাই না অনেক সময়, এজন্য বহু দিন ক্লাস ধরতে পারিনি। তাই এখন বাধ্য হয়ে নিজেরাই নৌকা চালান শিখেছি। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নৌকায় চড়ে আর শুকনো মৌসুমে হেঁটেই স্কুলে যাতায়াত করি। স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবক জানান,
উপজেলার নন্দীরগাঁও, তোয়াকুল, লেঙ্গুড়া ও ডৌবাড়ী ইউনিয়নসহ উপজেলার প্রায় ২৫টি বিদ্যালয়ে যাতায়াতে কয়েক যুগ থেকেই এ দুরবস্থা। বৃষ্টি ও রোদ উপেক্ষা করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়েই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। তবে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে একটি বড় নৌকার ব্যবস্থা করলে বর্ষার শুরু থেকে পানি শুকানো পর্যন্ত শিশু শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সুবিধা হবে। এদিকে শীতকালে খাল-বিল শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। তখন পড়তে হয় ভিন্ন সমস্যায়। এ সময় কোনো বাহনই চলে না। তখন শিক্ষার্থীদের হেঁটেই যাতায়াত করতে হয় শিক্ষালয়ে।
এ বিষয়ে শিয়ালা হাওর পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ ইউনুছ আলী জানান,হাওরাঞ্চলে রাস্তাঘাট নেই বললেই চলে। বর্ষা মৌসুমে সমগ্র হওরাঞ্চল ডুবে থাকে। চেঙ্গেরখাল নদী থেকে বর্ষার পানি কমলেও খাল-বিলের পানি না কমায় বছরের অধিকাংশ সময় নৌকা ছাড়া যাতায়াতের কোনো উপায় থাকে না। গোয়াইনঘাট
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতূল চন্দ্র জানান, ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া-আসার চিত্র দেখেছি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলকে অবগত করা হয়েছে। নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল
জানান, এখানে একটি কথা প্রচলন আছে ‘বর্ষায় নাও, হেমন্তে পাও (পা)’। বন্যার পানি কমে গেলেও হাওরাঞ্চলে খালে ও বিলে পানি থাকে । বছরের ৪/৫ মাস শিক্ষার্থীসহ সবাইকে নৌকায় পারাপার হতে হয়। তিনি আরো জানান, ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও হাওরাঞ্চলের মানুষের সুবিধার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ সালুটিকর হতে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর পর্যন্ত গাংকিনারী সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে গত কয়েক বছরে মন্ত্রী মহোদয় সালুটিকর গাংকিনারী সড়কের সিংহভাগ অংশে মাটির কাজ সম্পন্ন করেছেন। বাকি অংশে আগামী শুকনো মৌসুমে মাটির কাজ শেষ করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।