চুল মানুষের সৌন্দর্যের একটি বড় অংশ।প্রাচীন কাল থেকেই সৌন্দর্যের অংশ চুল। কেউ ভালোবাসে বড় লম্বা চুল কেউ বা ছোট। তাই চুলের যত্নের কোনো কমতি রাখা উচিত নয়। তবে মাথায় যদি চুলই না থাকে তো চর্চা হবে কিসের……..?তাই প্রতিদিন বা সপ্তাহে ৩-৪ দিন চুলের যত্ন নেওয়া উচিত।
মাথা ভর্তি লম্বা,সিল্কি চুল কে না চাই। কিন্তু সারা বিশ্বই নারী-পুরুষের চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা। চিকিৎসকদের মতে দিনে ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া তেমন কোনো সমস্যার কারণ নয়।চুল যেমন পড়ে তেমনি আবার নতুন চুল গজায়। কিন্তু অযত্ন, অবহেলা, সময়ের অভাবে কিংবা অপুষ্টির অভাবে চুল পড়তে শুরু করলে সেটাকে বড় সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত হয়। এ জন্য সুষম, প্রোটিন,ভিটামিন যুক্ত খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত চুলের যত্ন নিতে হবে।খুশকির কারণেও অনেক সময় চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়।
আমরা অনেকেই সময়ের অভাবে, কাজের ব্যস্ততার আমাদের চুলের যত্ন ঠিক ভাবে বাড়িতে নিতে পারি না এজন্য আমরা পার্লারে যেয়ে থাকি।পার্লারে গিয়ে চুলের পরিচর্যা করে থাকি। এতে চুল দেখতে অনেক সুন্দর হয় কিন্তু বর্তমানে এখন বাড়ির বাহিরে জাওয়া একেবারেই সম্ভব নয়। তাই হাতের কাছের যে উপকরণ আছে তা দিয়েই আমরা চুলের যত্ন নিতে পারি।
চুলের আগা ফাঁটা,চুল রুক্ষ হয়ে জাওয়া,চুল ঝড়ে পড়া ,চুলের আগা পাতলা হয়ে জাওয়া যেন আজকাল কম বেশি প্রতিটা মানুষেরই সমস্যা। চলুন তবে যেনে নেওয়া যাক চুলের যত্নের ঘরোয়া উপায়ঃ-
১.মেহেদি, ডিম, মধু ও টক দইয়ের হেয়ার প্যাক।
★দুই টেবিল চামচ মেহেদি বাটা/গুঁড়ো।
★একটা ডিম।
★এক টেবিল চামচ মধু।
★এক টেবিল চামচ টক দই।
সবগুলো উপকরণ একটি বাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। পুরো মাথার চুলে আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে এক ঘণ্টা পর ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আর ভিটামিন যা চুলকে গোঁড়া থেকে পুষ্টি যোগায়। টক দই স্ক্যাল্পের পি এইচ লেভেল ঠিক রাখতে সহায়তা করে আর চুলের ন্যাচারাল ডিপ কন্ডিশনিং এর কাজ করে।
২.মেথি,সরিষা ও অলিভ অয়েলের হেয়ার প্যাক।
★দুই চা চামচ মেথি গুড়া।
★এক চা চামচ সর্ষে গুড়া।
★২ চা চামচ অলিভ অয়েল।
দুই চা চামচ মেথি গুড়া এবং এক চা চামচ সর্ষে গুড়া একটি বাটিতে নিয়ে নিন। ২-৩ টেবিল চামচ কুসুম গরম পানিতে এই পাউডার ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এতে দু চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করুন।
এবার এই পেস্ট ভালোভাবে মাথায় ত্বকে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এবার শ্যাম্প করেচুল ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি মাসে একবার ব্যবহার করা যেতে পারে। নিয়মিত ব্যবহারে চুলের রুক্ষভাব দূর হবে। সরিষাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ রয়েছে যা চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে কাজ করে। এই প্যাকটি নতুন চুল গজাতে খুবই সাহায্য করে মেথি মাথার ত্বককে ঠান্ডা রাখে এবং চুলের আাগা ফাটা রোধ করে।
৩.পাকা কলা,মধু ও টক দইয়ের হেয়ার প্যাক।
★পাকা কলা একটি।
★মধু দই চা চামচ।
★টক দই ৪ টেবিল চামচ।
প্রথমে একটি কলার পেস্ট তৈরি করে নিন।তারপর কলার পেস্টের সাথে মধু ও টকদই ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।মেশানো হয়ে গেলে ১০-১৫ মিনিটের জন্য প্যাকটি রেখে দিন।
১০-১৫ মিনিট পর হেয়ার প্যাকটি চুলের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে ৪০-৫০ মিনিট অপেক্ষা করুন।তারপর শ্যাম্পু করে নিতে পারেন।মধুতে আছে ভেষজগুন যা চুল বৃদ্ধি করতে ও পাকা কলা চুল মসৃণ করতে সাহায্য করে।
৪.নিমপাতা,তুলশী পাতা,এলোভেরা, কালোকেশী ও নারিকেল তেলের হেয়ার প্যাক।
★এক চা চামচ নিমপাতা বাটা/গুঁড়া।
★এক চা চামচ তুলসী পাতা বাটা/গুঁড়া।
★দু চামচ এলোভেরা জেল।
★এক চা চামচ কোলোকেঁশী বাটা/গুঁড়া।
★এক চামচ নারিকেল তেল।
সবগুলো উপরকণ একটি বাতিতে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে হবে।তারপর চুলের গোঁড়া থেকে আগা পর্ষন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে।৪০-৫০ মিনিট পর ভালোভাবে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
এই হেয়ার প্যাকটি মাসে ২-৩ দিন ব্যবহার করা জাবে।কালোকেঁশী চুল কালো ও ঘন করতে সাহায্য করে।নিমপাতা চুলের ও তুলসীপাতা খুসকী সমস্যা দূর করে।
এছাড়া সপ্তাহে ৪-৫ দিন চুলের গোঁড়ায় নাড়িকেলের তেল ভালোভাবে ম্যাসাজ করে দিতে হবে এতে চুল মসৃণ হবে।গোসল করার পর ভেজা চুল আাঁচড়ানো ঠিক নয়। এগুলোর পাশাপাশি নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে, মৌসুমি ফল-মূল, প্রচুর পরিমাণে পানি, সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে।এবং ব্যক্তিগত অভ্যাস ও ঘুমের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া জাংক ফুড,ভাজা-পোড়া খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।