শুরু হয়েছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালে ঈশ্বরদীতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল ভাষা আন্দোলন ঘোর বিরোধিতাকারী পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের নামে বাংলাদেশের রেলওয়ে খাজা নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলের নামটি পরিবর্তনের অনেক দাবি উপেক্ষিত হওয়ায় এ মাসেই ঈশ্বরদীর সুধীমহলে অসন্তোষের ক্ষোভ প্রকাশিত হয় প্রতিবছর।
অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের নামকরণের অনেক কিছুই পরিবর্তন করা হলে ঈশ্বরদী শহরের লোকো রোডে অবস্থিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল ফটকে বড় বড় হরফের লেখা নাম টি এখনো শোভা পাচ্ছে। ১৯৫২ সালের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন হলেও রেলমন্ত্রণালয় এটি পরিচালনা করে।
ঈশ্বরদী পৌর এলাকার অবাঙ্গালী অধ্যুষিত ফতেমোহাম্মদপুর এলাকার লোকো রোডে উচ্চ দেয়ালে ঘেরা বিদ্যালয়টির অবস্থান। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সংবাদপত্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনেক লেখালেখি হয়েছে। তিন বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তনের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়। পাকশী বিভাগীয় রেলের অফিসে এই কমিটির পক্ষ থেকে তদন্ত-পূর্বক একটি প্রস্তাবনা পেশ করা হয় কিন্তু এরপরও রহস্যজনক কারণে বিষয়টি সুরাহা হয় নি।
বেশ কিছুদিন আগে এই স্কুলের নাম পরিবর্তন করার জন্য ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে স্কুলের প্রধান ফটোকে থেকে কালো কালি দিয়ে নাজিম উদ্দিন নামটি মুছে দিয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয় নি। আবার নামটি লেখা হয়েছে।
১৯৪৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুললে এর প্রবল বিরোধীতা করেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন। সেই বছরের ২১শে মার্চ ঢাকা রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষনা দেন উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।
তখন সংগঠিত আন্দোলন দমাতে মূলত খাজা নাজিমুদ্দিনের নির্দেশেই পুলিশ হত্যাযজ্ঞ চালায় বলে ইতিহাসে ধারণা করা হয়। অথচ রাষ্ট্রভাষা বাংলা শত্রুর সেই খাজা নাজিমুদ্দিনের নাম গত ৭১ বছর ধরে ঈশ্বরদীর মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে বয়ে বেড়াচ্ছেন। পাকিস্তান আমলে ঈশ্বরদীতে জিন্নাহ করে ছিল, স্বাধীনতার পর নাম পরিবর্তন করে সরকারি কলেজ করা হয়।
এছাড়া ঈশ্বরদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। অথচ বাংলা ভাষার বিরোধিতাকারী সেই খাজা নাজিমুদ্দিনের নামে বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় আজও রয়েছে বুক টান করে। এ যেন কটাক্ষ করার মতো ব্যাপার। নাম পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন লেখালেখি হয়েছে অনেক কিন্তু রহস্যজনক কারণে রেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না এ অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, রাজনৈতিক সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।