বর্তমান গ্রাম অঞ্চলে অধিকাংশে দেখা মিলে বাল্যবিবাহের। ছেলে মেয়েদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয় কখনো পারিবারিক অভাবের তাড়নায়, আবার কখনো পিতা-মাতার নিজ সম্মতি তথা ধনী কোনো পরিবারের কারণে কিন্তু তারা বোঝে না এতে তাদের ছেলে-মেয়েদের কতটা বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। প্রতিটা পরিবার প্রতিটা বাবা-মা চাই তাদের সন্তান যেন ভালো থাকে কিন্তু তাদের ভালো করার মাঝ থেকে তাদের ক্ষতি করে ফেলেন তারা এই বাল্যবিবাহের ফলে।
বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েদের পড়ালেখার মান কমে যেতে পারে। তাদের আয়-রোজগার কমে যেতে পারে এবং তারা ব্যাপক হারে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হতে পারে। এ ছাড়া গর্ভকালীন জটিলতা থেকে তারা মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারে, যা মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দেবে। মেয়েদের শিক্ষায় প্রবেশ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বেশি শিক্ষা মানেই তাদের নিজস্ব কর্মজীবনে অধিক উৎপাদনশীলতা ও উপার্জন। এটি পরবর্তী সময়ে তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। মানসম্মত শিক্ষা একজন মাকে স্বাস্থ্যসচেতন করে তোলে। গবেষণায় দেখা যায় যে, এটি তার সন্তানদের উত্তম পুষ্টি পেতে সাহায্য করে। অপুষ্টির কারণে শিশুদের নানা রোগ হয় এবং মৃত্যুহার বাড়িয়ে দেয়।
নারী শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হওয়া ছাড়াও বাল্য বিবাহের কারণে মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ মা হতে গিয়ে প্রতি ৩০ মিনিটে একজন মা মারা যাচ্ছেন অন্যদিকে প্রতি ঘন্টায় মারা যাচ্ছে একজন নবজাতক৷ নবজাতক বেঁচে থাকলেও অনেক সময় তাকে নানা শারীরিক ও মানসিক জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়৷ অপ্রাপ্তবয়স্ক মা প্রতিবন্ধী শিশু জন্মদান করতে পারে৷ এছাড়া এতে গর্ভপাতের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়৷ বাল্য বিবাহের ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের আশঙ্কা তৈরি হওয়া ছাড়াও নানা পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়৷ বাল্যবিবাহ সংকুচিত করে দেয় কন্যা শিশুর পৃথিবী।
বাংলাদেশে বিয়ের আইনসম্মত বয়স ১৮ বছর, তারপরও দেশে বাল্যবিবাহের হার অনেক বেশি। প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নারীর বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়। এদের মধ্যে অনেকের পরিবারই বরপক্ষকে যৌতুক দেওয়া এড়াতে তাদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়। বাংলাদেশের পরিবারগুলো প্রায়ই বাল্যবিবাহকে একটি জরুরি আর্থিক প্রয়োজন হিসেবে দেখে থাকে।
বাল্যবিবাহ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ একটি মারাত্মক সমস্যা৷ সাধারণত ছেলেদের বিবাহের বয়স ন্যূনতম ২১ এবং মেয়েদের বয়স ১৮ হওয়া বাধ্যতামূলক। অশিক্ষা, দারিদ্র, নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক নানা কুসংস্কারের কারণে এ আইনের তোয়াক্কা না করে বাল্যবিবাহ হয়ে আসছে৷ আমরা যদি সবাই সচেতন হই তাহলে কন্যা শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে৷ দেশে মা ও শিশুর অকাল মৃত্যু থেকে রক্ষা পাবে।