মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৬ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়া বিআরটিএ অফিস এখন ঘুষ-দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত

জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া / ২৬৬ বার পঠিত
আপডেট : সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৮:৩৬ অপরাহ্ণ

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচতলায় বিআরটিএ অফিসে চলছে ঘুষ দূর্নীতির মহাউৎসব। নামে মাত্র মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালালেও এক-দুই দিন দালালদের দৌরাত্ম্য থেমে থাকলেও পুনরায় আবার যা তাই চলছে উক্ত অফিসে।

বিআরটিএ অফিসে প্রায় ৫০ জনের অধিক দালাল নিয়োগ করা রয়েছে তারা তাদের চিহ্ন সম্বলিত কাগজপত্র প্রেরণ করলে তা জমা পড়ে, কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে সাধারণ সেবা প্রার্থীরা ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, মোটর সাইকেলের কাগজপত্র, ভারী যানবাহনের কাগজপত্র জমা দিতে গেলে বিভিন্ন ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে প্রতিনিয়ত বিদায় করে দিতে দেখা গেছে। তবে ওই সকল ফাইলগুলি পুনরায় দালালের মাধ্যমে আসলে ঠিকই জমা দিচ্ছেন বিআরটিএ অফিস।

করোণা মহামারীর কারণে দীর্ঘ কয়েক মাস অফিস বন্ধ থাকার পর বিআরটিএ অফিস এখন পুরোদমে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা। বর্তমানে অফিসে প্রবেশ করেই দেখা যায়, যে যার মতো ফাইলপত্র ও বিভিন্ন কাগজপত্রে সিল মারায় ব্যস্ত। ভাবসাবে তাদেরকে কর্মকর্তা মনে হলেও আসল পরিচয় হচ্ছে ওরা ‘দালাল’। চাকরি ছাড়াই রীতিমতো চেয়ার টেবিলে অফিস করছেন তারা। বাস্তবে এসব দালালরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কুষ্টিয়া কার্যালয়। দালাল দিয়েই কাজ করতে হয় এটাই যেন নিয়ম বলে মেনে নিয়েছে গ্রাহকরা।

দালালরা মাকড়াসার জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেই জাল ভেদ করে কেউ অফিসের মূল কর্মকর্তার কাছে ভিড়তে পারেন না। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন হাজার হাজার গ্রাহক। বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে তাদের। এতে সরকার নয়, লাভবান হচ্ছেন দালাল আর কর্মকর্তারা। এই সকল অর্থ দালালরা প্রতি বৃহস্পতিবারে মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারীর কাছে জমা দেন। জানা গেছে উক্ত এক সপ্তাহের সকল অর্থ উপর থেকে নিচ পর্যন্ত রেশিও অনুপাতে বিলিবণ্টন করেন আব্দুল বারি।

মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারীর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য এক হাতে তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দালাল প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। চাহিদা অনুযায়ী টাকা পরিশোধ না করলেই গ্রাহকদের হয়রানি করা হয়। এতে বিআরটিএ কার্যালয়ে সেবা নিতে গেলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এখানে ঘুষ আর দালাল ছাড়া কোনো কাজই হয় না বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। অভিযোগ আছে, ঘুষ না দিলে কোন ফাইল বা কোন মোটরসাইকেলের গ্রাহকের ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট এর কাজ হয় না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নতুন সড়ক পরিবহন আইনে জরিমানা ও শাস্তির বিধান বাড়ায় রেজিষ্ট্রেশন, লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ নিতে কুষ্টিয়া বিআরটিএ অফিসে প্রতিদিন ভিড় করছে সেবা প্রত্যাশী শতশত মানুষ। আগের তুলনায় কাজ প্রায় দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। আর চালকসহ যানবাহন মালিকদের সচেতন করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ। কিন্তু দেশের অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনায় শত শত মানুষের প্রাণহানি কমাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে সরকারের সকল মহতি উদ্যোগ মানছে না লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ অফিস।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিচে বিআরটিএ কার্যালয়টি অবস্থিত। ওই কার্যালয় থেকে গ্রাহকরা যানবাহন ও মোটরসাইকেল নিবন্ধন, যানবাহনের রুট পারমিট ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের সেবা নেন।বিআরটিএ’র কর্মচারীরা দালালদের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার আর মোটরসাইকেল নিবন্ধনের জন্য ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রত্যেকের একাধিক দালাল ফিট করা রয়েছে। বাড়তি টাকা দিয়ে দালালদের ধরলে এক মাসের কাজ নিমিষেই চোখের পলকে হয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, সরকারি ফি জমা দিয়ে নিয়ম অনুযায়ী কাগজপত্র জমা দিতেই পারিনি। যার কাছে যায় সেই দালাল। অফিসের কর্মকর্তাকেই খুজে পায়নি। পরে ব্যবহারিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে দুই বছর যাবৎ ঘুরছি কিন্তু লাইসেন্স পাচ্ছিনা। অথচ পরিচিত অনেকেই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে লাইসেন্স পেয়েছে। এভাবে সরকারি একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, কুষ্টিয়া বিআরটি এর কার্যালয় যেন হরিলুটের কারখানা খুলেছে, ঘুষ ছাড়া এই বিআরটিএ অফিসে কোন কাগজ পত্র নড়ে না, বা কোন গ্রাহক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। অন্যদিকে, অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে এক রকম নাম মাত্র পরীক্ষায় দালালদের মাধ্যমে অদক্ষ চালকদের অবাধে দেয়া হচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্স।

বিআরটিএ অফিসে বর্তমানে সবচাইতে বেশি দূর্নীতি চলছে একটি জায়গায় সেটি হল ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় পাশের জন্য প্রত্যেক গ্রাহককে দালালের মাধ্যমে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। উক্ত অর্থের অংশ চলে যায় বিআরটিএ অফিসের আব্দুল বারীর কাছে বাকি অর্ধেক দালালরা ভোগ করে। তবে অফিস সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি পরীক্ষা বোর্ডের জন্য নির্ধারিত সংখ্যা ২০০ জন থাকার কথা থাকলেও সেখানে আব্দুল বারি ৩০০ অধিক পরীক্ষার্থীকে অংশ গ্রহণ করাচ্ছেন অর্থের বিনিময়ে। উল্লেখ্য, প্রতিটা পরীক্ষা বোর্ডে উপস্থিত থাকেন এই দূর্নীতিবাজ মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারী। কারণ প্রতিটা লার্নারের উপরে প্রতিটা দালালের একটি সাংকেতিক চিহ্ন থাকে, উক্ত চিহ্ন দেখিয়ে তাদেরকে পাস করিয়ে দেয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অফিসের কর্তাব্যক্তি মোটরযান পরিচালক আব্দুল বারী, রাকিব, নাহিদুজ্জামান সহ সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে এই দালালচক্র। এ বিষয়ে আব্দুল বারীর ‌ মুঠোফোন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না বলে লাইন কেটে দেন। অন্যদিকে বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক এ টি এম জালাল উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নাই। ভুক্তভোগীরা কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের দৃষ্টিগোচর করে বলেন, দালালকে নয়, অফিসের কর্তাব্যক্তিদের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!