শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

‘ গর্বের ঈশ্বরদীর কৃষি ‘

নিজস্ব প্রতিবেদক / ১৮৩ বার পঠিত
আপডেট : রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২২, ৫:০২ অপরাহ্ণ

উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হিসেবে ঈশ্বরদী এখন দেশব্যাপী পরিচিত একটি জনপদের নাম । এখানে যেমন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে তেমনি ঈশ্বরদী ইপিজেডে ৩২৪ টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে । এই ধারা অব্যাহত আছে ।

অন্যদিকে কৃষি সেক্টরেও প্রচুর সফলতা এসেছে । তবে মৌসুমে উপযুক্ত দাম না পাওয়ার একটা সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় উৎপাদকদের । কৃষিতে অভিজ্ঞ একাধিক ব্যক্তি বলেছেন , আমাদের দেশে এখনও বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় প্রকৃত উৎপাদনকারীরা কৃষিপণ্যের সঠিক দাম পায় না । অনেক সময় উৎপাদন খরচও ওঠে না । এই অবস্থায় মাঠের কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন না হলেও মধ্যস্বত্তভোগীরা মুনাফা লুটে নেয় ।

ঈশ্বরদীতে ভাল ফলন হয় এমন কয়েকটি কৃষিপণ্যের উল্লেখ করা হলো ।

আগাম শিম চাষ

আগাম শিম চাষ করে সফল হয়েছেন ঈশ্বরদীর কৃষকরা । আগাম ‘ অটো শিম চাষে করে কৃষকরা প্রতিবারই লাভবান হয় । এবারো লাভবান হবেন তারা । এই স্বপ্ন রয়েছে তাদের । এই শিমের পরিচর্যায় চাষিরা ব্যস্ত । নাওয়া খাওয়া ছেড়ে চাষিরা এখন শিমের ক্ষেতে ফুল ও ফলের পরিচর্যায় সময় পার করছেন । মুলাডুলি এলাকার যে দিকে দু’চোখ যায় মাঠের পর মাঠ জুড়ে চোখে পড়বে শিমের ক্ষেত । শিমের লতা – পাতার সবুজ সমারোহের সাথে গোলাপী ও সাদা ফুল পথচারীদের নজর কাড়ছে ।

এরই মধ্যেই কিছু কিছু গাছে শিম ধরতে শুরু করেছে । আগাম অটো শিমে লাভবান হওয়ার আশায় স্বপ্নে বিভোর ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের কৃষকরা । দেশের অন্যতম শিম উৎপাদনকারী এলাকা ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে হিসেবে খ্যাত জোরেসোরেই চলছে আগাম শিম চাষ । জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝিতে আগাম শিম চাষের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয় । বৃষ্টির পানি থেকে শিম গাছকে রক্ষা করতে জমিতে ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে ঢিবি বা বিট । উঁচু বিটে তারা অটো শিম চাষ হয়েছে ।

‘ অটো ‘ জাতের শিম গাছ ইতিমধ্যেই মাচায় উঠে ফুলে ফুলে ভরে গেছে । আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই পুরোদমে এসব শিম বাজারে উঠবে । আগাম অটো শিম চাষে প্রতিবছরই সফলতা পায় এখানকার চাষিরা । যেকারণে প্রতিবছরই শিমের আবাদ বাড়ছে । শিম চাষকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল সবজির বাজার । মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক শিম ঢাকা , সিলেট , চট্টগ্রাম , বরিশালসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে চালান হয়।

ঢ্যাঁড়শের ফলন ভাল

এবার ঈশ্বরদীতে ঢ্যাঁড়শের ভাল ফলন ও বাজারে দাম ভাল হওয়ায় কৃষকরা খুশি ছিল । ঢ্যাঁড়শের এবার ফলন হয়েছে খুব ভালো । আর অন্য বছরের তুলনায় এবারে বাজারমূল্য প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা । ঢ্যাঁড়শের আবাদ এলাকা ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কৃষকদের মধ্যে খুশির পরিবেশ ছিল । মুলাডুলি ইউনিয়নের পতিরাজপুর ও নিকরহাটা এলাকায় শত শত হেক্টর জমিতে ঢ্যাঁড়শের আবাদ হয়েছে । ফলন বেশ ভালো । প্রতি মণ ১৫০ টাকা চুক্তিতে নারী – পুরুষ ও শিক্ষার্থীরা জমি থেকে ঢ্যাঁড়শ তোলে । নিকরহাটার মোর্শেদ আলী জানান , ১৬ বিঘা জমিতে ঢ্যাঁড়শ আবাদে বিঘায় খরচ হয়েছে ২০-২২ হাজার টাকা । ৫০-৬০ হাজার টাকার ঢ্যাঁড়শ বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন ।

সার , বীজ ও কীটনাশকের দাম না বাড়লে চাষিরা আরও লাভবান হতো বলে জানান তিনি । চাষি মোজাম্মেল জানান , ডিজেল – সার কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোনো ফসলেই লাভবান হতে পারছেন না । এবারে ঢ্যাঁড়শের বাজারদর বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হতে পারছে । এর আগে পাইকারি বাজারে ঢ্যাঁড়শ প্রতি কেজি ২০ টাকার বেশি বিক্রি হয়নি । কিন্তু এবারে ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে । এখনও ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ।

আখের ৪৮ জাত উদ্ভাবন করেছে বিএসআরআই

ঈশ্বরদীস্থ বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ( বিএসআরআই ) ‘ এ আখসহ মিষ্টি জাতীয় ফসলের উৎপাদন কলাকৌশল উদ্ভাবন ও বহুমুখী ব্যবহারের ওপর গবেষণা করা হয় ।

আখের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে এদেশের মিষ্টিজাতীয় খাদ্যের উৎস চিনি ও গুড় তৈরির শিল্প ।

এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি আখের পাশাপাশি সুগারবিট , তাল , খেজুর , গোলপাতা , মধু ও স্টিভিয়া প্রভৃতি মিষ্টি জাতীয় ফসলের ওপর গবেষণা করে আসছে । ইন্সটিটিউট সূত্রে জানা যায় , প্রতিষ্ঠানটি দেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে ।

১৯৫১ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএসআরআইয়ের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয় । এর আগে ১৯৩১ সালে ঢাকার মনিপুরীপাড়ায় এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় । স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত আখের ৪৮ টি জাত উদ্ভাবন করেছে বিজ্ঞানীরা । এর মধ্যে তিনটি চিবিয়ে খাওয়া সুস্বাদু আখের জাত রয়েছে । দেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে বিএসআরআই সারাদেশে তিনটি আঞ্চলিক কেন্দ্র ও ৯ টি উপকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে । এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৮৩ বিজ্ঞানী , ৩৯৩ কর্মকর্তা কর্মচারী ও ১১৬ শ্রমিক কর্মরত আছেন ।

ঈশ্বরদীর প্রত্যন্ত এলাকাজুড়ে উল্লেখিত সফলতা ছাড়াও গাজর , লিচু , টমেটো , বেগুন ইত্যাদি সব্জী ও ফলেও সফলতা রয়েছে । এই এলাকায় মৌসুমী সব্জী ও ফল সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নেই । এ কারনে উপযুক্ত পদ্ধতিতে এগুলো সংরক্ষণের কোন সুযোগ কৃষকদের । কিছুদিন রেখে চাহিদার সময় কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারলে উপযুক্ত দাম পৈত উৎপাদনকারীরা । বিষয়টি নজরে আনার জন্য দাবি জানিয়েছেন অনেক কৃষি উৎপাদক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!