সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের অফিস সহকারি ফয়সল আহমদকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। তার বদলির সংবাদে উপজেলার সাধারণ ভুক্তভোগীদের মধ্যে স্বস্থি ফিরে এসেছে। গত ক’দিন ধরে তার পূনরায় বদলির গুঞ্জন শুনা যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সুনামগঞ্জ থেকে এ বদলির আদেশ দেয়া হয়।
এদিকে অফিস সহকারী ফয়সল আহমদ তার বদলি ঠেকাতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে থেকে নানা অনিয়ম কর্মকান্ডের কারণে সাধারণ মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছিল। তার মূলনীতি উৎকোচের বিনিময়ে ধর্নাঢ্যদের সহযোগিতা করা আর গরীবদের হয়রানি করা। এছাড়া তার অশোভন আচরণের কাছে এতদিন সাধারণ মানুষ জিম্মি ছিল। অফিস সহকারী ফয়সল ইতিপূর্বে বার বার বদলি হলেও অদৃশ্য খুটির জোরে বহাল তবিয়তে থেকে বিতর্কিত কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় জনসাধারণ মানববন্ধন সহ গণসাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফয়সল আহমদ দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে থাকার সুবাদে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
তিনি উপজেলার জলমহালগুলো অমৎস্যজীবিদের পাইয়ে দেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেন। কিছুদিন পূর্বে নলজুর নদীতে বেলজাল বসানোর নামে উৎকোচ আদায় করেন। অবশ্য সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মানে পিআইসি কমিটির কাছ থেকে কমিশনের নামে ঘুষ বাণিজ্য, নলজুর নদী খননে টিকাদারের জনৈক এক লোকের মাধ্যমে মাঠি বিক্রি করে নদী পাড়ে ভিটা নির্মান, সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ চত্তরে সরকারি গাছ বিক্রির নামে চলে নাটকীয়তা। পরে তাকে গাছের ভাগ দিলে নামেমাত্র নিলামে বিক্রি করা হয় মুল্যবান গাছগুলো। এই গাছের কাটের ফার্নিচার তার বাসায় এখনও দৃশ্যমান।
বিগত লকডাউন চলাকালে বড় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ করতে তৎপর ছিলেন ফয়সল আহমদ। অনেক গরীব দিনমজুরকে হয়রানি করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন আবেদন ও অভিযোগের কপি বিভিন্ন অজুহাতে ফেলে রাখতেন তিনি। এর প্রতিবাদ করতে চাইলে নানা হুমকি দিতেন ভুক্তভোগীদের। এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী এখলাছুর রহমান, আব্দুল হাদী, বাস্পাতা বেগম, চমকতেরা বেগম, দলবি বেগমসহ অনেকেই।
অভিযোগ রয়েছে, অফিস সহকারী ফয়সল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কথা বলে এবং মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে জনসাধারনের কাছ থেকে বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা আদায় করে যাচ্চিলেন। বিশেষকরে এ উপজেলায় দীর্ঘ দিন ধরে থাকার সুবাদে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন ফয়সল। তাদের মাধ্যমে অনিয়ম-দুর্নীতি সহ বিভিন্ন সরকারি কাজ ভাগিয়ে নেন তিনি। পান মোটা অংকের কমিশন। এসব ঘুষের টাকা দিয়েই মূলত তার বাড়ী ও গাড়ী। তদন্ত হলেই সত্যতা বেড়িয়ে আসবে এমনটাই ধারণা সচেতন মহলের।
এ ব্যাপারে সদ্য যোগদানকারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাজেদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, অফিস সহকারি ফয়সলের বদলির আদেশ পেয়েছি। তাকে জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ মহোদয়ের কার্যালয়ে যোগদান করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।