ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ছবিতে দেখা যায়, এক ছাত্রী মেঝেতে বসে পা দিয়ে বৃত্ত ভরাট করছেন।
১৮ বছর বয়সী এই পরীক্ষার্থীর নাম সুরাইয়া। বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার আন্ধারিয়া সুতির পাড় গ্রামে।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও পড়ালেখার প্রতি আগ্রহের কারণে ছোট থেকেই চেষ্টা করতে থাকেন দুই পা দিয়ে লেখার। এভাবেই আন্ধারিয়া সুতির পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৪ পেয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
এরপর আন্ধারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সলে জেএসসিতে জিপিএ-৪ ও ২০১৮ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ১৭ পান। এইচএসসি পাস করেছেন ২০২০ সালে শেরপুর মডেল গার্লস ডিগ্রি কলেজ থেকে। এতে পেয়েছেন জিপিএ-৪।
ভাঙা ভাঙা ভাবে সুরাইয়া আমাদের জানান। তার মা বলে দেন মেয়ে বলছে, ‘আমি ফার্স্ট ক্লাস অফিসার হতে চাই।’
এই ইচ্ছাকে পূরণ করতেই ছুরাইয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া।
প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম নেয়ায় প্রথমে সুরাইয়াকে বোঝা মনে করতেন বাবা ছফির উদ্দিন ও মা মুর্শিদা ছফির। তবে মেয়ের অদম্য চেষ্টা ও ইচ্ছাশক্তি দেখে তাদের চিন্তাভাবনাতেও পরিবর্তন আসে। তারা মনে করেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে তাদের মেয়ে অনেক বড় হবে।
মায়ের আশা, প্রতিবন্ধী কোটায় হলেও যেন মেয়েটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়।
সুরাইয়ার চাচাত বোন মরিয়ম আক্তার আমাদের বলেন, ‘আমরা প্রথমে মনে করতাম এই মেয়েটার ভাগ্যে ভালো কিছু নাই। কী আর করতে পারবে এভাবে? শুধু শুধু বাবা-মার কষ্টই বাড়বে।
‘তবে এখন মনে করি ওর ইচ্ছাশক্তিই আশীর্বাদ হয়ে গেছে। আশা করি সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসবে। মেয়েটা একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
প্রতিবেশী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রতিবন্ধী মেয়েডারে দেইখা আমরা মনে করতাম এডারে দিয়ে কী করব? এহন দেহি ও অনেকখানি নেহাপড়া কইরা ফেলাইছে।’
জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা জানতে পারলাম দুই পায়ে লিখে প্রতিবন্ধী সুরাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। আমরা আশা করছি সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে। কারণ কারো সাহায্য ছাড়া দুই পায়ে লিখেই সে এ পর্যন্ত এসেছে। আমরা ওই মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সব ধরণের সহযোগিতা করব।