বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়তে চান মরিয়ম বেগম ।। বুবুর চোখে জল।। বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, প্রেমিক সেলিম কে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব ২০৪১ সালের আগেই পাবনা স্মার্ট জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পাবে- রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার  ঈশ্বরদীতে মালবাহী দুইটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ কুরিয়ার সার্ভিসে গাঁজা পরিবহনের সময় আটক-১ শ্যামলী বাসে আস্থা রেখে সর্বস্ব খোয়ালেন গরু ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ পণ্যের দাম, নামমাত্র বাজার মনিটরিং এর ফলাফল শূণ্য সিলেট সদর উপজেলার নির্বাচনে ‘মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান’ পদে প্রার্থী  কাকলী বঙ্গবন্ধুর  জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও ইফতার মহফিল অনুষ্ঠিত 

বিজ্ঞ আদালতে ৪ বছরের শিশুকে হত্যার দায় স্বীকার করলেন সৎ পিতা ও মাতা

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার / ২১২ বার পঠিত
আপডেট : বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৫৩ অপরাহ্ণ

শেষ রক্ষা হলো না।
শিশু হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক ঘাতক সৎ পিতা এবং সহযোগিতার জন্য মা গ্রেফতার।
দায় স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদান।

সুমাইয়া আক্তার মীম প্রকাশ সুমা আক্তার চার বছরের একটি মেয়ে শিশু। শিশুটি তার মা বুলবুল আক্তার(২৫) এবং সৎ পিতা নুরুল হক(৩৫) এর সাথে কক্সবাজারের উখিয়া থানাধীন ৩নং হলদিয়াপালং ইউপির ১নং ওয়ার্ডের পূর্ব মরিচ্যা কাঠালিয়া সাকিনে জনৈক মোস্তফা জাবেদ এর টিনের কলোনিতে ছোট্ট একটা রুমে ভাড়া থাকতো। নুরুল হক (৩৫) শিশুটির সৎ পিতা হলেও ছোট্ট সুমাইয়া তাকে আব্বু বলেই ডাকতো। তাদের সাথে আশপাশের প্রতিবেশী কারো কোন সখ্যতা গড়ে উঠেনি।

প্রায় দুইমাস এই কলোনিতে ভাড়া থাকা অবস্থায় ঘাতক নুরুল হক তার স্ত্রী বুলবুল আক্তারের সহযোগীতায় শিশুটিকে বিভিন্ন সময়ে অমানবিক নির্যাতন করতে থাকে। কখনো প্লাস্টিকের রশি দিয়ে ঘরের চালের তীরের সাথে উলটো করে ঝুলিয়ে, কখনো মাথায় আঘাত করে, কখনো গালে কামড় বসিয়ে আবার কখনোবা পেটে পীঠে ঘুষি মেরে চলতে থাকে অমানবিক পৈশাচিক নির্যাতন। এই অসহনীয় ব্যাথায় শিশুটি চিৎকার করে আর্তি জানাতো “আব্বু আমাকে আর মারিও না, আমি তোমার সব কথা শুনবো”। তথাপিও ঘাতক সৎপিতা নুরুল হকের হৃদয় গলেনি কিংবা স্বামীর নেশায় মত্ত থাকা মা বুলবুল আক্তারের মন গলেনি।

গত ১৫/০৪/২০২১ ইং তারিখ মাহে রমজানের ২য় দিন সকাল থেকে শিশু সুমাইয়া(৪) কে না খাইয়ে রাখে। এমনকি পানি পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি৷ একই দিন বিকাল ১৬.০০ ঘটিকার পর থেকে শিশুটির উপর শুরু অমানবিক নির্যাতন। প্লাস্টিকের রশি দিয়ে বেধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। সেই সাথে ঘাতক নুরুল হক এর ঘুষির আঘাত। অতিরিক্ত ব্যাথায় নির্বোধ সুমাইয়া কান্না করার শক্তিও হারিয়ে ফেলে। একপর্যায়ে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পরে৷ মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য মেয়েটির গলা টিপেও ধরা হয়। একই তারিখ দিবাগত রাত আনুমানিক ২১.০০ ঘটিকার সময় শিশুটি মৃত্যুবরণ করে। শিশু সুমাইয়ার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর শিশুটিকে ঘরের মেঝে পাটির উপর শুইয়ে কম্বল চাপা দিয়ে ঘর তালাবদ্ধ করে ঘাতক সৎপিতা নুরুল হক এবং মা বুলবুল আক্তার সেহেরীর পর রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। পরদিন সকাল সাড়ে দশটার দিকে পাশের রুমের ভাড়াটিয়া জনৈক রোজিনা আক্তার সুমাইয়াদের ঘরে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজা তালাবদ্ধ দেখে পাশের রুম থেকে পার্টিশন বেড়ার উপর দিয়ে দেখে শিশু সুমাইয়ার নিথর দেহ কম্বল চাপা অবস্থায় বিছানার উপর পড়ে আছে৷ এই দৃশ্য দেখে রোজিনা হাউমাউ করে চিৎকার দিয়ে উঠে। রোজিনার চিৎকার শুনে পাশের দোকানের মতি মিয়া দৌড়ে আসে। ততক্ষণে আশপাশ থেকে আরো অনেক মানুষ এসে ভিড় জমায়৷ রোজিনার কথা শুনে সবাই দরজা ভেঙে দেখে ঘরের মেঝে পাটির উপর কম্বল চাপা অবস্থায় শিশু সুমাইয়ার নিথর মৃতদেহ পড়ে আছে।

এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে এসে বিস্তারিত উখিয়া থানা পুলিশকে জানায়। সংবাদ পেয়ে উখিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। আশপাশের মানুষদেরকে ভিকটিমের পিতা-মাতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে কেউ কোন তথ্য দিতে পারেনি৷ বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার তথ্য সংরক্ষণ করে রাখেনি।

ময়নাতদন্ত শেষে স্থানীয় জনগণ শিশুটির দাফন কাফন সম্পন্ন করে। ঘটনার চারদিন পর উখিয়া থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামির কথা উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা রুজু করে। দ্বিতীয়দিন পুনরায় ঘটনাস্থলটি পুংখানু-পুংখভাবে পরিদর্শনকালে ঘরে একটি সিম কভার খুজে পাওয়া যায়৷ উক্ত কভারের ভেতর থাকা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে আসামিদের পরিচয় সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। আসামের বাড়ি ভিন্ন এলাকা, ভাসমান অবস্থায় ঘোরাঘুরি এবং ঘনঘন অবস্থান পরিবর্তন করার কারণে তাদের গ্রেফতার করা সম্ভবপর হচ্ছিল না।

ঘটনার ৪ মাস পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায় যে, সুমাইয়ার মামার সন্ধান পাওয়া গেছে। উক্ত সংবাদ প্রাপ্তির পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে উখিয়া থানার একটি চৌকস টিম রামু থানাধীন গর্জনীয়া এলাকায় গিয়ে কৌশল অবলম্বন করে আসামিদের অপেক্ষায় ঐত পেতে থাকে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর আসামিরা গর্জনীয়া বাজারে পৌছামাত্র তাদেরকে ধৃত করতে সমর্থ হয়। কয়েক দফা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে শিশু সুমাইয়া আক্তার মীমকে(৪) নির্মম নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠে। এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত আসামিরা সুমাইয়া(৪) হত্যা করার কথা স্বীকার করে। তাদের নিজেদের দায় স্বীকার করে ৩০/০৮/২০২১ বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে। ঘটনার পর থেকে তারা কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, চকরিয়া, লোহাগড়া ও চট্টগ্রামের অনেক জায়গায় আত্মগোপন করে থাকে।

কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না, পুলিশের তৎপরতায় গ্রেপ্তার হয়ে তারা এখন বিজ্ঞ আদালতে হয়ে জেলখানায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!