মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ন

ভোলার চরফ্যাসনে ইটের ভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ ॥ দূষণ হচ্ছে পরিবেশ, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য

মোঃ ফাহিম মোল্লা,চরফ্যসান, ভোলা প্রতিনিধি / ২১৪ বার পঠিত
আপডেট : শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০২২, ৭:২১ অপরাহ্ণ

ভোলার চরফ্যাসনের জনবসতি এলাকায় আবাদি জমিতে অবৈধ ভাবে ইটভাটা গড়ে তোলে অবাধে বনের কাঠ পোড়াচ্ছে। এসব ভাটার ধোঁয়ার দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি ফলফলাদি, গাছগাছালি ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং পরিবেশ হারাচ্ছে বৈচিত্র, বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন।

কয়লার মুল্য বৃদ্ধিও দোহাই দিয়ে নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনির ইট ভাটার পাশাপাশি অধিকাংশ ঝিকঝাক ভাটায়ও বনের কাঠ পুড়ছেন, আবার ভাটার পাশেই অবৈধ ভাবে গড়ে তুলেছেন করাতকল। এসব করাতকলে কাঠ চেড়াই করে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ ভাটায় শিশুকিশোররা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। এতে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে তারা।
পরিবেশ অধিদপ্তর সুত্রে জানাযায়, চরফ্যাসন উপজেলায় ৩২ টি ইটের ভাটা রয়েছে, তার মধ্যে ১৪ টি ইটের ভাটার অনুমোদন রয়েছে।
উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নের ফাহিম বিক্সে গিয়ে দেখা যায়, ভাটার পাশেই টমেটু, লাউ, কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের বৃহৎ একটি খামার, চার পাশে মানুষের বসত বাড়ি। ভাটার ধুঁয়ায় বসত বাড়ির গাছ গাছালি মরে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে ফসলের ক্ষেত। ভাটাটি ঝিকঝাক হলেও পোড়ানো হয় বনের কাঠ। বনের কাঠ চেড়াই করার জন্য ভাটার পাশেই রয়েছে একটি অবৈধ করাত কল। পার্শ্ববর্তী খালে কাঠ ভর্তি একটি নৌকা খালাসের অপেক্ষায় নোঙ্গর করা দেখা গেছে।
হাজারী গঞ্জ ইউনিয়নের সামরাজ এলাকায় মোহনা বিক্সে গিয়ে দেখা যায়, ভাটার পাশেই বনের কাঠের বিশাল স্তুপ, এসব বিশাল স্তপ থেকে কাঠ স্ব-মিলে চেরাই করে ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার ধুঁয়ায় বসত বাড়ির গাছ গাছালি মরে যাচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে ফসলের ক্ষেত। ভাটাটি ঝিকঝাক ও অনুমোদন আছে বলে দাবী ভাটা মালিক পক্ষের। তবে এর স্বপক্ষে কোন কাগজ দেখাতে পারেননি। ওই এলাকার সরমান বিক্সে গিয়েও একই দৃশ্য দেখা গেছে। সরমান ব্রিক্সের ম্যানেজার ফাহিম ইটের ভাটাও করাত কলের অনুমোদন আছে দাবী করলেও এর স্বপক্ষে কোন কাগজ দেখাতে পারেননি। তবে ফাহিম দাবী করেন পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের দুই লাখ টাকা জরিমানা করে এবছরের জন্য কাঠ পুড়ে ইট তৈরীর অনুমতি দিয়ে গেছেন।
ফাহিম বিক্সের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম, মোহনা ইটভাটার মালিক বেলায়েত হোসেন মহাজন জানান, সরকারি নিয়মকানুন মেনে ইটভাটা পরিচালনা করতে গেলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। কয়লার দাম অনেক বেশি তাই ভাটায় কাঠ পোড়াতে হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শোভন বসাক বলেন- ইটের ভাটার ধোয়ায় শাসকষ্ট ও ফুসফুসের ক্যান্সার, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার আবু হাসনাইন বলেন- ইটের ভাটার গরমে গাছ ও ফসলী ক্ষেত্র পুড়ে যায়, মৎস্য খামারের মাছও মরে যায়, আর ধোয়ায় ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান বলেন- বিষয়টি লিখিত ভাবে জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হবে, সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর ভোলার সহকারী পরিচালক মো.আবদুল মালেক বলেন, ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে তিনটি অবৈধ ইট ভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ৯ টি ভাটার সাড়ে ১৭ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
স্থানীয়রা তাদের ওই অভিযানকে লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রথম দিন অভিযান শেষে রাতে অবৈধ ভাটা মালিকরা উপজেলা সদরের ডাক বাংলোতে এসে দেখা করে রফাদফা করে নাম মাত্র জরিমানা দিয়ে গেছেন।
এ প্রসংগে পরিবেশ অধিদপ্তর ভোলার সহকারী পরিচালক মো.আবদুল মালেক বলেন- স্থানীয় প্রশাসনের সুপারিশের কারণে অবৈধ ইট ভাটাগুলো না ভেঙ্গে জরিমানা করতে হয়েছে

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!