করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে কাল থেকে শুরু হবে সর্বাত্নক লকডাউনে কঠোর বিধিনিষেধ।এবারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী।কঠোর বিধি নিষেধে সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে মন্ত্রীপরিষদের পক্ষ থেকে।
বুধবার (৩০জুন)মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত এসব বিধিনিষেধ চলমান থাকবে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও জরুরি সেবাগুলোকে ‘বিধি-নিষেধ’র আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
সর্বাত্নক লকডাইনের এই ১ সপ্তাহ অতি জরুরি (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনা, চিকিৎসা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বাইরে বের হতে পারবে না। নির্দেশ না মানলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহন হবে।
এই ৭ দিনের মধ্যে যারা করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার তারিখ পেয়েছেন, তারা প্রশাসন কে টিকা কার্ড দেখিয়ে টিকা গ্রহণ করতে কেন্দ্রে যেতে পারবেন।
তাছাড়া জরুরি পরিষেবা ছাড়া সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু রাখা যাবে। বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল বন্দর এবং সংশ্লিষ্ট অফিস নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না।ব্যাংকিং সেবা চালু রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। আদালতের বিষয়ে নির্দেশনা দেবে সুপ্রিম কোর্ট।
সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন, অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল এবং সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহনের গাড়ি বা নৌযান নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
সব ধরনের পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।জনসমাবেশ হয়- এমন সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান-ওয়ালিমা, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি), রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও করা যাবে না।
সুপারসপ,শপিংমল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। তবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাবেচা করা যাবে।আর খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শুধু খাবার বিক্রি (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাক্রম, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট দেখিয়ে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজ কীভাবে হবে, সে বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের এলাকা, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন।
সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন।