পাবনা ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের রহিমপুরে জাহিদুল ইসলাম প্রাং (৪৯) এর ঘরে অজ্ঞাত প্রতিবন্ধী হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন।সব আসামি গ্রেফতার।
পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান,ঈশ্বরদী থানায় আজ এক প্রেস ব্রিফিং এ হত্যার মূল রহস্যের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
ঈশ্বরদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব ফিরোজ কবির ও ওসি আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকশ টিম কাজ শুরু করে। জাহিদুল এর স্ত্রী সামেলা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঈশ্বরদী থানায় আনা হলেও সে ভিকটিমের নাম-ঠিকানা দিতে ব্যর্থ হয়। এমনকি সে ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টিও অস্বীকার করে। গত ইং-২৫/০৬/২০২১ তারিখ প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক মিলন এর লাশের ময়নাতদন্তের পর লাশটি মর্গে প্রেরণ করা হয়।
তদন্তে জানা যায় যে, নিহত প্রতিবন্ধী ভিক্ষুকের নাম মোঃ মিলন হোসেন (৩০), পিতা-আবু বক্কার মাতুব্বর, মাতা-মোছাঃ রাফেজা বেগম, সাং-কানফরদী, থানা-নগরকান্দা, জেলা-ফরিদপুর। সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। স্বাভাবিকভাবে হাটাচলা করিতে পারে না। সে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানার দর্শনায় কার্পাসডাঙ্গার ভূমিহীন পাড়ায় তাহার শ্বশুড় বাড়ীতে থাকিয়া ভিক্ষা করিত। তদন্তের একপর্যায়ে ঘটনার সাথে জড়িত আসামী ১। মোঃ জাহিদুল ইসলাম প্রাং, ২। শ্রী নিরঞ্জন চন্দ্র দাসকে ইং-২৭/০৬/২০২১ খ্রিঃ সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থেকে এবং ৩। মোঃ শাকিল কে একই তারিখ ঈশ্বরদী থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে, বিগত ৫/৬ বছর পূর্বে ভিকটিম মিলন এর সাথে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা এলাকায় ভিক্ষা করা অবস্থায় জাহিদুল এর সাথে ভিকটিম মিলন এর পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে কয়েক বছর মিলনকে আসামী জাহিদুল ইসলাম তার ভ্যানে করিয়া দর্শনা এলাকায় ভিক্ষা করত। একপর্যায়ে আসামী জাহিদুল ইসলাম দর্শনা হইতে তার নিজ বাড়ীতে ফিরে আসে। পরবর্তীতে আসামী জাহিদুল ভিকটিম মিলনকে মাসিক ১০,০০০/-টাকা চুক্তিতে তাহার পাবনা জেলার চাটমোহর থানার রেল বাজার এলাকায় তার ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে আসে। উক্ত বাসায় নিরঞ্জন নামে আরো একজন লোক ভাড়া থাকিত। জাহিদুল তার ভ্যানে মিলনকে নিয়ে তার দ্বারা ভিক্ষা করাতো এবং মাঝে মাঝে নিরঞ্জনও ভিকটিম মিলনকে দিয়ে একই কাজ করাতো। ০২ মাস ভিক্ষা করার পর ভিকটিম মিলন এর ২০,০০০/-টাকা পাওনা হলে আসামী জাহিদুল ভিকটিম মিলনকে ৫,০০০/-টাকা দিয়ে বাঁকি ১৫,০০০/-টাকা না দিয়ে কালক্ষেপন করিতে থাকে। এতে করে আসামী জাহিদুল ও ভিকটিম মিলন এর ঝগড়া হয়। তার পর আসামী জাহিদুল, জাহিদুল এর স্ত্রী সামেলা, ছেলে শাকিল ও নিরঞ্জন ভিকটিম মিলনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনা মতো গত ইং-২৪/০৬/২০২১ তারিখ রাত্রী অনুমান ০১.০০ ঘটিকার সময় তারা জাহিদুলের ছেলে শাকিল এর রুমে ঘুমিয়ে থাকা ভিকটিম মিলনকে ঘুম থেকে উঠায়। হত্যার উদ্দেশ্যে আসামী নিরঞ্জন ভিকটিম মিলন এর বুকের উপর চেপে বসে এবং হাত দিয়ে ভিকটিমের দুই হাত চেপে ধরে। আসামী শাকিল ভিকটিমের গলা চেপে ধরে এবং আসামী জাহিদুল ইসলাম ভিকটিমের অন্ডকোষে চাপ দেয় ও ব্লেড দিয়ে ভিকটিম এর লিঙ্গের মাথায় পোচ দেয়। এমতাবস্থায় ভিকটিম নিস্তেজ হয়ে গেলে উল্লেখিত আসামীগন ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ভিকটিম মিলনকে তাহাদের ভাড়া বাসায় থাকা ভ্যানের উপর শোয়ায়। তাদের কথা মতো আসামী সামেলা চার্জার ভ্যানের বৈদ্যুতিক তার সংযোগ দিয়ে ভ্যান সহ মিলনকে বিদ্যুতায়িত করে ভিকটিম মিলন এর মৃত্যু নিশ্চিত করে। সকালে বাড়ীর অন্যান্য সদস্যদের নিকট ভিকটিম ভ্যানের চার্জার খুলতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায় মর্মে প্রচার করে এবং লাশ ভিকটিমের বাড়ীতে পৌছে দেওয়ার কথা বলে লাশ নিয়ে বের হয়। ইং-২৪/০৬/২০২১ তারিখ সকাল বেলা আসামী জাহিদুল তাহার ভ্যানে ভিকটিম এর লাশ উঠিয়ে মাথার নিচে বালিশ দিয়া চাদর দিয়ে ঢেকে আসামী নিরঞ্জন একপাশে ও সামেলা একপাশে বসিয়া চাটমোহর রেলবাজার হইতে ঈশ্বরদী থানাধীন আওতাপাড়া রহিমপুর গ্রামে আসামী জাহিদুলের বাবা মানিক এর বাড়ী নিয়ে আসে এবং রাতের বেলা আশেপাশের কোন এক স্থানে পুঁতে ফেলার উদ্দেশ্যে মানিকের শয়ন ঘরের মধ্যে লাশটি লুকিয়ে রাখে। এর মধ্যেই পুলিশ সংবাদ পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে।
এই ঘটনায় মোট ০৪ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাহাদের মধ্যে জাহিদুল ও নিরঞ্জন গত ২৭/০৬/২০২১ তারিখে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকাররোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে ।