সারাদেশে কমবেশি লিচু চাষ হলেও লিচু রাজ্য নামে খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এবার লিচুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। ফাল্গুনের মাতাল হাওয়ায় ঈশ্বরদীর প্রায় ৮৫ ভাগ গাছেই থোকায় থোকায় দুলছে লিচুর সোনালী মুকুল। সবুজ পাতার ফাঁকে হলদেটে মুকুল গুচ্ছ যেনো হাসছে। আর সেই হাসিতে মাতাল হয়ে মৌমাছিগুলো উড়ছে।
লিচু ঈশ্বরদীর প্রধান অর্থকরী ফসল। ঈশ্বরদীর গ্রামাঞ্চলের কৃষকরা বেশির ভাগই লিচু চাষের ওপর নির্ভরশীল । আর্থিক বিবেচনায় ঈশ্বরদীর গ্রামাঞ্চলের ফসলি জমিতে এখন অনেকেই লিচুবাগান করেছেন । আর লিচুবাগানের আয় থেকেই এসব কৃষকদের সারা বছরের ভরণপোষণ নির্ভর করে ।
ছ
দেশ জুড়ে ঈশ্বরদীর লিচুর একটি বিশেষ সুনাম রয়েছে। ঈশ্বরদীতে সবচেয়ে বেশি বোম্বাই ও মোজাফ্ফর জাতের লিচু চাষ হয়ে থাকে। অনেকে শখের বশে মাদ্রাজি, বেদানা, চায়না ত্রি, চায়না ফোর জাতের লিচু চাষ করে থাকেন।
সাধারণত জানুয়ারি মাসের শেষে এবং ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমে বোম্বাই লিচুর গাছে মুকুল আসে । কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন দেরিতে মুকুল আসছে । তবে মোজাফ্ফর জাতের লিচুর মুকুল জানুয়ারির প্রথম দিকে আসায় এই জাতে কোনো সমস্যা হয়নি ।
লিচুর চাষ দেখতে সরেজমিনে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, গাছে সবুজ পাতা ভেদ করে সোনালী মুকুল বের হতেই স্বপ্নে বিভোর লিচু চাষী ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগানের পরিচর্যায়। আগেই কিনে রাখা বাগানগুলো পরিচর্যা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরাও। সপ্তাহখানেক পর থেকেই বোম্বাই জাতের মুকুল সম্পূর্ণরুপে ফুটবে। তবে মোজাফফর জাতের লিচুর মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। তার তাতেই বাগানে আনাগোনা শুরু হয়েছে মৌমাছির। বিভিন্ন জেলা থেকে মৌ চাষীরা ইতিমধ্যে মৌমাছি নিয়ে এসেছেন মধু সংগ্রহ করতে।
শিলা বৃষ্টি বা কালবৈশাখীর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে না পড়লে ঈশ্বরদীতে এবার রেকর্ড পরিমান লিচু উৎপাদন হবে বলে মনে করছেন এখানকার লিচু চাষীরা।
লিচু মানিকনগরের লিচু চাষী মোস্তাফা জামান নয়ন বিশ্বাস বলেন, এবার গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। ভালো ফলন পেতে নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করছি। মুকুল আসার আগ থেকে ফল আসা পর্যন্ত প্রায় তিন মাস সঠিক পরিচর্যা খুবই জরুরি।
লিচু ব্যবসায়ী আবুর আলী বলেন, প্রতিবছর আমরা কিছু বাগান আগেই কিনে রাখি। মুকুল বের হওয়ার পরও অনেক বাগান কেনা হয়। এবার ব্যাপক হারে মুকুল ধরায় অনান্য বছরের তুলনায় বেশী লাভ হবে বলে আশা করছি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা মন্ডল জানান, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদী উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ৪০০ হেক্টরের বেশি জমিতে লিচু চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৮০০ হেক্টর বেশি। ফলন্ত প্রতিটি গাছে ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত লিচু ধরে । তিনি আরো জানান , প্রতি বছর এখানে ২০-২৫ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হয় । টাকার হিসেবে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকারও বেশি লিচু ঈশ্বরদীতে বিক্রি হয় । জলবায়ু ও প্রাকৃতিক পরিবেশ এবারে লিচু চাষের জন্য এখন পর্যন্ত অনুকূলে । প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ঈশ্বরদীতে এবারে রেকর্ড পরিমাণে লিচু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।