পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর ঘর বদলে দিয়েছে সেখানে বসবাস করা কয়েক হাজার মানুষের জীবনযাত্রাকে। কিছুদিন আগেও যাদের ছিল না কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই, তারা এখন রঙিন টিন আর আধাপাকা বাড়িতে বসবাস করছেন। একটা সময় অন্যের জমিতে দয়া-দাক্ষিণায় থাকা সেই মানুষ আজ আত্মনির্ভরশীল। কৃষি থেকে শুরু করে নানা কাজের মাধ্যমে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
উপজেলার বহরপুর, সাঁড়া ও কোলেরকান্দি আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে এখন বদলেছে ছিন্নমূল মানুষের যাপিত জীবনের চিত্র। রঙিন টিন আর পাকা দেয়ালের আধাপাকা বাড়িতে করছে শাকসবজির আবাদ। কেউবা করছে হাঁস-মুরগি, ছাগল ও গরু পালন। আবার কেউ ঘরের বারান্দায় হস্তশিল্প ও
চায়ের দোকানের মতো খুদ্র ব্যবসার মধ্য দিয়ে চেষ্টা করছেন আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ার। অনেকে আবার সন্তানদের পাঠাচ্ছে স্কুলে। বসতির দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছে সংসার। সংসারে এসেছে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। বসবাসের জন্য সরকারের দেওয়া এই সুবিধাটি পেয়ে খুশি আশ্রয়হীন এসব মানুষ।
উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের বহরপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বিধবা জামিলা বেগম জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে সন্তান নিয়ে নানা জায়গায় কাজ করে থাকত হতো মানুষের জমিতে ছাপড়াঘরে। রোদ-বৃষ্টির সঙ্গে তার যুদ্ধের শেষ হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে। এখন মিল চাতালে কাজের পাশাপাশি ছাগল পালন করে শান্তিতে বসবাস করছেন তিনি।
ষাটোর্ধ হেকমত-শনিকা দম্পতি জানান, আগে অনেক কষ্টে দিন কাটত। এখন জমি আর ঘর পেয়ে কষ্টের দিন শেষ হয়েছে। ঘর পাওয়ার পর বসতঘরের বারান্দায় হাঁস-মুরগি ও গরু ছাগল পালন করছি। বর্তমানে তার গোয়ালে ১ টি গরু ও ৬ টি ছাগল রয়েছে।
ওমর ফারুক নামের একজন বলেন, কিছুদিন আগেও ভাবিনি নিজের ভালো একটা বসবাসের ঠিকানা হবে, এখন সেটি হয়েছে, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছি। ঈশ্বরদী ইপিজেড এ কাজের সুবাদে অভিজ্ঞতা হওয়ায় এখন বসত বাড়ির বারান্দায় সেলাই মেশিন বসিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির অর্ডারকৃত গার্মেন্টস পন্য তৈরী করছি। নিজেরা হাঁস-মুরগি পালনসহ নানা কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, সত্যই এটা স্বপ্নের। এমনটি হবে ভাবিনি, সৃষ্টিকর্তার কাছে হাসিনার জন্য দোয়া করি।
আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে জামেলা, হেকমত আর ফারুকের মতো বদলে গেছে দেশের উত্তর-পশ্চিমের জেলা পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার কয়েক হাজার পরিবারের ভাগ্য। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় এখানে বসবাসকারী সবার।
উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের আশ্রায়ণ প্রকল্পের পাশে অবস্থিত রামচন্দ্র বহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, আশ্রায়ণ প্রকল্প থেকে বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থী যাতে ঝরে না পড়ে, তারা যেন সুশিক্ষিত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেদিকে আমরা লক্ষ্য রেখে কাজ করছি।
পাবনা ৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নূরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, আশ্রায়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী মানুষের সফলতার গল্প এখন ঈশ্বরদীর আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর ঘরে ঘরে। এ উপজেলা ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত। এটা গর্বের বিষয় ঈশ্বরদীবাসীর জন্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপনে তারই কন্যা শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, দেশে কেউ থাকবে না ভূমি, গৃহহীন। তারই অংশ হিসেবে সফল বাস্তবায়নের পথে আওয়ামী লীগ সরকার।
ঘর দিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিয়ে প্রকল্পে বসবাসকারীদের স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন বলে দাবি তাদের।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর মানুষের জন্য আমরা যা কিছু করা দরকার সবই করেছি। ঘর দেয়ার পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আওতায় এনে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া এর আগে তাদের মাঝে হাঁস-মুরগি,গরু- ছাগল বিতরণ করা হয়েছে। আশ্রায়ণ প্রকল্পগুলোতে অনেক স্বামী পরিত্যক্তা নারী আছেন। তাদের সেলাই মেশিন বিতরণসহ নানাভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করা হয়েছে। এখন তারা নিজেরাই নিজেদের সংসার চালান। প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়নে আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি।