পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা। যার মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নেই রয়েছে ৫২টি ইটভাটা। পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের কোনো নিয়মনীতি না মেনেই অবৈধভাবে এসব ইটভাটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিবছর শীতের মৌসুমে সচল হওয়া এসব অবৈধ ভাটাগুলোতে ড্রাম চিমনি ব্যবহার করা হয়। যেখানে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হয় কাঠ। এসব ভাটা দিয়ে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়ে এলাকার পরিবেশ সবসময় দূষণযুক্ত করে রাখে। ঐ এলাকায় অবাধে নিধন হচ্ছে গাছপালা। অপরদিকে কৃষি জমি বিনষ্ট করে টপ সয়েল কেটে তা ব্যবহার করা হয় ইট তৈরীর কাজে। বেশিরভাগ ভাটার মালিকরা স্থানীয় প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের সাথে আতাত করে ইট তৈরির জন্য অবৈধ উপায়ে পদ্মার চর হতে মাটি সংগ্রহ করে থাকে।
ফসলি জমি নষ্ট, ভাটায় কাঠ পোড়ানো, নিয়মনীতি লঙ্ঘন ও পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার বিষয় উল্লেখ করে প্রতিবছরই জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে এতে বন্ধ হয়না এসব ইটভাটা।
সংবাদ প্রকাশ হলেই তাৎক্ষনিক কপাল খোলে প্রশাসনের, লোক দেখানো অভিযান আর দু চারটি ইট ভাটায় ৩০-৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে অদৃশ্য কারণে আবার ঘুমিয়ে যায় প্রশাসন। ৩০-৫০ হাজার টাকা জরিমানা নাকি উচ্ছেদ অভিযান কোন টি স্থায়ী সমাধান সেটাই ভাববার বিষয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, ভাটা মালিক সমিতির একজন জানান, সংবাদ প্রকাশ হলেই প্রশাসন এসে জরিমানা করে। প্রতিবছরই আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর, প্রশাসন ও গুটি কয়েক সাংবাদিক কে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করি। ম্যানেজ না করলে ভাটা চালানো সম্ভব হয় না। অভিযানের আগের দিনও আমরা প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং করেছি। তিনি আরও জানান, জরিমানা তো ভাটা মালিকদের আর্থিক লোকসান। এতে ইট তৈরীর কাজে কোনো বিঘ্ন ঘটে না।
এর আগে ২০১৯ সালের এপ্রিলে পরিবেশ অধিদফতর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিলো।সে সময় যৌথবাহিনী লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ৪টি ইটভাটা গুড়িয়ে দেয় হয়। সেসময় কয়েকটি ইটভাটার মালিকদের নিকট হতে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা আদায় হয়েছিলো, বলা হয়েছিল পর্যায়ক্রমে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ইটভাটাগুলো উচ্ছেদ করা হবে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যায়।
তারপর আর কখনো ঈশ্বরদীতে আসতে হয়নি পরিবেশ অধিপ্তরকে। কারণ ভাটা মালিকরায় নাকি সময় মতো পরিবেশ অধিদপ্ততের অফিসে যান। নেপথ্য সহযোগিতায় আবারো চালু হয়ে যায় ভাটাগুলো।
লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফ বলেন, প্রথম দিকে এসব ভাটা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিলেও এখন আর নবায়ন করে না। বর্তমানে এসব ভাটার ট্রেড লাইসেন্স বা ইউনিয়ন পরিষদের কোনো ছাড়পত্র নেই।
উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় অবশ্য মাঝে মাঝে এসব অবৈধ ইটভাটা গড়ে ওঠার বিষয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন অনেকেই। তবে কথায় আছে জিইয়ে রাখা মাছের স্বাদ যে অনেক বেশি।