ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হঠাৎ বেড়েছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ইতিমধ্যে হাসপাতালটিতে আক্রান্ত ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে বিন্দুমাত্র সচেতনতার বালায় নেই রোগী কিংবা সাথে থাকা স্বজনদের। শুক্রবার সকালে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে সরজমিনে এসব তথ্য জানা গেছে। হাসপাতালটিতে দেখা যায়, ডাক্তারদের নিয়মিত তদারকির পরও নির্দেশনা অমান্য করে দিনের বেলা মশারি বাদে শুয়ে আছেন ভর্তি থাকা সব কয়টি রোগী। এসময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িঘড়ি করে মশারি টানাতে শুরু করেন তাদের স্বজনরা।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালেমোট ৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন। তারা সবাই পুরুষ। এদের মধ্যে সবাই রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিক।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী রেজান নগরের বাসিন্দা তুষার বলেন, ‘আমি রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করি। এখানেই বাসা ভাড়া থাকি। হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীরব্যথা ও জ্বর হয়। কোম্পানিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হই। পরে সেখান থেকে এসে গত মঙ্গলবার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছি। এখন আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ।’
আক্রান্ত হওয়া আরেক জন লিটন বলেন, ‘হঠাৎ মাথাব্যথা, শরীরব্যথা ও জ্বর অনুভব করি। পরে হাসপাতালে এসে পরীক্ষা করা হলে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের বিষয়টি বুঝতে পারি। তারপর হাসপাতালে ভর্তি হই।
আক্রান্ত রোগী সোহেল জানান, রুপপুর পারমানবিকে কাজ করি। হঠাৎ করে জ্বর, মাথাব্যথা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। অনেক ওষুধ খাওয়ার পরেও জ্বর ভালো না হওয়ায় বিভিন্ন পরীক্ষা করাই। পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে গত পরশু দিন হাসপাতালে ভর্তি হই। জ্বর কিছুটা ভালো হলেও শরীর দুর্বল।’
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত চিকিৎসক ফাওজিয়া ইয়াসিম জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজন ভর্তি হয়েছিলো এখন রোগীর সংখ্যা ৫ জন। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে আক্রান্তদের সবাই রুপপুর পারমাণবিকের শ্রমিক। আক্রান্ত হয়ে এখানে ভর্তি হচ্ছেন।
ডেঙ্গুকে দৃশ্যমান শত্রু হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলপন, ডেঙ্গু মশাবাহিত একটি রোগ। ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে হলে এডিস মশা নিধন করতে হবে। মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে। এক্ষেত্রে অবহেলা করা হলে সামনে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ডাক্তাররা। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রচারণা থাকলেও নেই কার্যকর ব্যবস্থা। চিকিৎসার পাশাপাশি নিজেদের সচেতন থাকা জরুরী বলেন জানান তিনি। রুপপুর পারমানবিক এলাকায় অস্থায়ী কোয়াটার গুলোর অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বসবাস করার কারনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু গৃহপালিত মশার কামড়ে হয়। নগরীর চার পাশের ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থাকায়, নোংরা ড্রেন পরিষ্কার না করায় চলতি বর্ষা মৌসুমে মশার প্রজনন বেড়ে যায়। নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এবং মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করলেই মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
পৌর কর্তৃপক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি জনগণেরও সচেতন হতে হবে। জমাটবদ্ধ স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা হয়। তাই ঘরের আশপাশে পানি জমাটবদ্ধ অবস্থায় রাখা যাবে না। এডিস মশা ঘরের ভেতরেই থাকে। দিনের বেলায় কামড়ায়। তাই এখন থেকে সকলকে সচেতন হতে হবে।