মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ

খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান, এইচএসসিতে পাশ মাত্র তিন

ঈশ্বরদী, পাবনা প্রতিনিধি / ৮৩১ বার পঠিত
আপডেট : শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১১:৪৩ অপরাহ্ণ

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঈশ্বরদী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ৩০ জন শিক্ষার্থী এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছিলেন। এরমধ্যে পাশ করেছে মাত্র তিনজন শিক্ষার্থী। বাকি ২৭ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে।

রবিবার (২৬ নভেম্বর) প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের মোট ৩০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশের হার মাত্র ১০%। এতে অন্যান্য কলেজগুলো থেকে পাশের হারে সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এমন ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তাদের দাবী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির উদাসীনতা ও কলেজ শাখায় শিক্ষক সংকটের কারনে এমনটি হয়েছে। এদিকে শিক্ষকরা বলছেন শিক্ষার্থীদের পাঠদানে কোন ক্রুটি বা অবহেলা করা হয়নি। কি কারনে এমনটি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। জানা গেছে, ১৯২৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম ঈশ্বরদী গার্লস স্কুল নামে কার্যক্রম শুরু করলেও ২০১৩ সাল থেকে কলেজ শাখা চালু করা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটির নামকরন করা হয় ঈশ্বরদী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ। শুরুতেই ২৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে শতভাগ পাশ করেছিল। ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির পাশের হার ছিল ৯০ শতাংশ এবং ২০২২ সালে পাশের হার ছিল শতভাগ। স্কুল শাখায় ১৯ জন ও কলেজ শাখায় খন্ডকালীন ১০জন শিক্ষক দিয়েই কলেজ শাখায় পাঠদান করানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অকৃতকার্য বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, স্কুল শাখার শিক্ষক দিয়েই আমাদের পাঠদান করানো হতো। শিক্ষক সংকট থাকার কারনে নিয়মিত পাঠদানও ব্যাহত ছিল। তবে আমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি ও পরীক্ষা ভালো হয়েছে। তারপরও আমরা কেন অকৃতকার্য হয়েছি বুঝতে পারছি না। সবাই ইংরেজি বিষয়েই ফেল করেছে। বোর্ড চ্যালেঞ্জ করেছি। আশা করছি ফলাফল ভালো হবে।

এদিকে অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কলেজ শাখায় শিক্ষক সংকটের ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব ভূমিকাহীন ছিল। স্কুল শাখার শিক্ষকদের দিয়ে পাঠদানের কারনে এমনটি হয়েছে। যে শিক্ষকগুলো পাঠদান করতেন তাদের বেতনও ঠিকমত দেওয়া হয়না তবে পাঠদানে তাদের তো অবহেলা থাকবেই।

ঈশ্বরদী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজি বিষয়ক শিক্ষক আব্দুল ওয়ালিদ লিমন বলেন, ২০১৫ সাল থেকে বিগত বছর পর্যন্ত এরকম ফলাফল এমন হয়নি। এবারের ৩০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র তিনজন উত্তীর্ণ হয়েছে আর বাকি সব শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়ে ফেল করেছে। এটার কারন হিসেবে বলতে পারি তাদের ইংরেজি বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ ছিলনা। শ্রেণীকক্ষে তাদের পাঠদানে কোন ক্রুটি রাখা হয়নি। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের বোর্ড চ্যালেঞ্জ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগামীতে যেন এরকম ফলাফল আর না হয় সে ব্যাপারে আমরা শিক্ষকরা সতর্ক ও নতুন পরিকল্পনা গ্রহন করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, কলেজ শাখায় ১০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের অতি সামান্য সম্মানি দেয়া হয়। সেজন্য এসব শিক্ষকরা নিয়মিত আসেন না এবং পাঠদান করান না। নিয়মিত পাঠদান করালে অবশ্যই শিক্ষার্থীরা পাশ করতো। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সভাপতির এ বিষয়টির প্রতি খেয়াল করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেননি। সেজন্য ফলাফলের এমন করুন দশা।

অধ্যক্ষ আসলাম হোসেন বলেন, এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় কলেজ শাখা থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেছে। এরমধ্যে ২৭ জনই শুধুমাত্র ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। তবে এমনটি কেন এবং কি কারনে হয়েছে তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা চলছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কলেজ শাখা খোলার অনুমতি পেলেও এটি এখনো পর্যন্ত এমপিও ভুক্ত হয়নি। এখানে ৩ জন নিয়োগপ্রাপ্ত ও ৭ জন খন্ডকালীন শিক্ষক রয়েছে। এদের কেউ বেতন পায় না। কলেজ শাখা ২০১৫ সালে চালু হলেও এখনো পর্যন্ত এমপিভুক্তির জন্য আবেদন করা সম্ভব হয়নি। এবার ভেবেছিলাম এমপিও করার জন্য আবেদন করবো। কিন্তু এমন ফলাফলে সবাই হতাশ হয়েছি।

প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুরাদ আলী মালিথা জানান, কলেজ শাখায় বেশির ভাগ শিক্ষক খন্ডকালীন। এসব শিক্ষকদের চাকুরি এমপিও ভুক্ত হয়নি। বিদ্যালয় থেকে তাদের সামান্য সম্মানী দেওয়া হয়। এ সম্মানীতে শিক্ষকের জীবনযাপন সম্ভব নয়। তাই শিক্ষকরা পাঠদানে তেমন আগ্রহ দেখায় না। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও পড়াশোনায় অমনোযোগী থাকার কারনেও এমনটি হতে পারে।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ বলেন, পরীক্ষার অসন্তোষজনক ফলাফলের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তা বিস্তারিত জানতে হবে। তারপর আমি আপনাদের জানাতে পারবো।

রাজশাহী মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (কলেজ) প্রফেসর মাহবুবুর রহমান বলেন, যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফলাফল সন্তোষজনক নয় সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। ইতিপূর্বে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক হওয়ায় তাদের এমপিও চালু হয়েছে। কিন্তু এমপিও স্থগিতকালীন সময়ের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করা হয় না। এটি তাদের শাস্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। যেহেতু এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখা এখনো এমপিও ভুক্ত হয়নি। কলেজ শাখা এমপিও’র আবেদন করলে তাদের পরীক্ষার ফলাফল অবশ্যই দেখে এটি এমপিও বিষয়ে বিবেচনা করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!