সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে লোকাল গভর্নমেন্ট সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-৩) প্রকল্পের ১ম, ২য় ও দক্ষতা ভিত্তিক (পিবিজি) বরাদ্ধকৃত অর্থের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে এসব বিষয়ে স্থানীয় জনগণকে কিছুই জানানো হয়নি। ফলে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে একটি শুকনো খালের উপর অপ্রয়োজনীয়ভাবে সড়কবিহীন ১ মিটার প্রস্থ ও ৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি কালভার্ট। যা নির্মাণে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। কালভার্টটি যে স্থানে করা হয়েছে তার দু’পাশে কোন রাস্তার অস্তিত্ব নেই। এলাকাবাসীর প্রশ্ন এই কালভার্ট দিয়ে কি হবে ? নতুন কালভার্ট নির্মাণ করা হলেও তার দুপাশে মাটি ভরাট না করায় এটি স্থানীয়দের কোন কাজেই লাগছে না। রাস্তা বিহীন এই কালভার্ট স্থানীয়দের কোন কাজে লাগবে? বলে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন গ্রামের অধিবাসীরা।লোকাল গভর্নমেন্ট সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-৩) এর আওতায় উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে খাড়া ঘাট নামের একটি শুকনো খালের উপর এই কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মুনিম মুন্সি বলেন, স্থানীয় কৃষকদের ফসলাদি বাড়ি নেয়ার জন্য খাড়া ঘাট নামক খালের উপর একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিদ্ধান্ত নেই । কিন্তু প্রকাশ্যে কোন দরপত্র আহবান না করেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজেই সেখানে কালভার্ট তৈরি করেছেন। কিন্তু কালভার্টের কোন পাশেই মাটি ভরাট করা হয়নি। মাটি ভরাট করা না হলে এটি কৃষকের কোন উপকারে আসবে না। পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের আরেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, খালটির দুই পাশেই রাস্তা আছে। কৃষকদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই ওই স্থানে কালভার্ট নির্মাণের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে মোতাবেক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। নাম-প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক ব্যক্তি বলেন, সামান্য দুরেই আরেকটি ব্রিজ থাকা সত্বেও খালের মধ্য এত কম প্রস্থের কালভার্ট নির্মাণ কেন? আর দু’পাশে কোথাও মাটি ভরাট করা হয়নি কেন। তিনি বলেন তাহলে কেন এখানে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত মাটি ভরাট করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই কালভার্ট কৃষকদের উপকারে আসবেনা। সরেজমিনে গেলে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মুনিম মুন্সিকে নিন্মমানের কাজ ও রাস্তা ছাড়া ৭ লাখ টাকার কালভার্ট নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন কালভার্ট- আমরা কেউ করিনি কাজ করেছেন চেয়ারম্যান নিজে। তারা আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সমস্ত কাজ করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও তার কাছের লোকেরা।
নিন্মমানের কাজ ও রাস্তা ছাড়া কালভার্ট নির্মাণ বিষয়ে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, ইস্টিমেট অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। কালভার্টের উভয় পাশে মাটি ভরাট করা হবে। জানা গেছে, লোকাল গভর্নমেন্ট সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-৩) আওতায় উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মে জড়িয়ে আছে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। উপজেলা প্রকৌশলীর নেতৃত্বে উপ-সহকারী প্রকৌশলীরা ইউপি সদস্যদের সাথে যোগসাজোসে এসব প্রকল্প অফিসে বসেই ইস্যটি মেট ও তদারকি করে থাকেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চাহিদার বিপরীতে ব্রিজটিসহ আরো দুটি প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়েছিল। কালভার্টটি দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল উপ-সহকারী প্রকৌলশীকে। তিনি আপনাদের সঠিক তথ্য দিতে পারবেন। তবে উপ-সহকারী প্রকৌশলী কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা সব সময় লেগে থাকলে তো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব হবে না। আমি লাঞ্চে যাচ্ছি। অফিস সহকারীর কাছ থেকে জেনে নেন। তবে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের অফিস সহকারী বলেন আমরা তো এসব প্রকল্পের সব তথ্য উপাত্ত দিতে পারবো না। এসব ফাইলগুলো উপ-সহকারী প্রকৌশলীরা’ই সংরক্ষণ করেন। তারাই এসব তথ্য ভালভাবে দিতে পারবেন। খাড়া খালের ওপর নির্মিত কালভার্টের উভয় পার্শ্বে মাটি নেই কেন জান্তেচাইলে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, বৃষ্টির কারণে উভয় পার্শ্বে মাটি দেওয়া হয়নি। শুকনো মৌসুমে মাটি ভরাট করা হবে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার
তাহমিলুর রহমান বলেন, পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে খাড়া খালের উপর
নির্মিত কালভার্টের উভয় পার্শ্বে রাস্তা নেই ও কাজের
গুনগত মান খারাপ হয়েছে শোনে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। ওই কালভার্টের বিল পরিশোধ করা হয়নি। উভয় পার্শ্বে রাস্তা নির্মাণের পর তাদের বিল পরিশোধ করা হবে।