করোনাকালীন সময়ে যখন সারা দেশে লক ডাউন চলছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ হয়ে যায় তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র, শহিদুল্লাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রকিবুল ইসলাম তৌকির বই খাতা গুছিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে আসে৷ তার বাড়ি শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার রাণিশিমূল ইউনিয়নের বানিয়া পাড়া গ্রামে। সে নিজের পড়াশোনার ফাকে ফাকে শহরে প্রচুর টিউশন করাতো। গ্রামে এসেও, এলাকায় স্বল্পমূল্যে শিক্ষামূলক সেবা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায় পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকায় কয়েকটা ব্যাচ পড়িয়ে বেশ ভালো আয় করে।
এই টাকা সে এদিক সেদিক ব্যয় না করে ‘বর্ণালী এগ্রো ভ্যালি’ নামের একটা কৃষিভিত্তিক প্রজেক্ট করেন। বর্ণালী অর্থ অনেক রঙের সমাহার৷ ২৫ শতকের একটা পুকুরের চারপাশে পাড়ের উপর ড্রাগন ফলের প্রজেক্টের কাজ শুরু করেন এবছরের জানুয়ারিতে৷তার এই প্রজেক্টে ড্রাগনের সবচেয়ে মিষ্টি এবং রেয়ার জাত ‘হলুদ প্যালরা’সহ মোট ৫ টি জাতের ৫০ টি খুটি রয়েছে। পুকুরে মাছ চাষের জন্য নিজের তৈরি এয়ারেটরের সাহায্যে অধিক ঘনত্বে বৈজ্ঞানিক পদ্ধাতি অবলম্বন করে মাছ চাষ করছে৷এছাড়াও পুকুরের উপর সুন্দর একটা টং ঘর তৈরি করেছে যাতে প্রায় ২০ টি কবুতরের বাসা রয়েছে। খামারটির সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করেছে পুকুরে থাকা রাজ হাস। ৪ টি রাজহাস সারাক্ষণ পুকুরে থাকে যা দেখতে সত্যি মনোমুগ্ধকর। এছাড়াও দুইটি গাভী রয়েছে। শীতের সকালে তার তৈরি টং ঘর থেকে সূর্য উদয়ের দৃশ্য সত্যি অপূর্ব। তার সবমিলিয়ে ১.৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে এই প্রজেক্টে। এ বছর সে আশা করছে ৪০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করবে এবং ২০ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করবে। তবে আশা করা যায় আগামি বছর থেকে তার আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে এই অল্প বয়সে তার উদ্দোক্তা হওয়ার কথা এলাকায় ছড়িয়ে পরলে সবার কাছে তার এই কাজ প্রশংসনীয় হচ্ছে। তার এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য ছিল চাইলে পরিত্যক্ত অল্প জমিতেও যে অনেক কিছু করা সম্ভব তা গ্রামবাসিকে অবহিত করা এবং আমাদের যুব সমাজকে উদ্দোক্তা হতে অনুপ্রেরণা যোগানো।