বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৬:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ
ঈশ্বরদী তে এমপির নির্দেশে “পৌর ছাত্রলীগের তীব্র দাবদাহে পিপাসা মেটানোর জন্য শরবত বিতরণ” আমার পক্ষে ভোট চাইলে কারো মাথা নিচু হবে না-আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ঈশ্বরদীতে পৃথক ঘটনায় দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার আত্মহত্যার ঘটনাকে হত্যা বলে প্রচারের অভিযোগ  ঈশ্বরদীতে বাবার হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সন্তানদের আহাজারি  ঈশ্বরদীতে মাটির পুতুল পোড়াতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ স্কুল শিক্ষার্থী  ঈশ্বরদীতে পুকুরে গোসলে নেমে শিক্ষার্থীর মৃত্যু রায়পুর মানব কল্যাণ সংস্থার  ইফতার ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত  জীবনের জয়গান মানব কল্যান সংস্থার উদ্যোগে ঈদ উপহার বিতরণ ক্লাব আইজিয়ান এর উদ্যোগে ইফতার মহফিল অনুষ্ঠিত 

নয় বছরের শিশুর কাঁধে পুরো সংসারের বোঝা।

সেঁজুতি স্নিগ্ধা,বিশেষ প্রতিনিধিঃ / ৪০৪ বার পঠিত
আপডেট : শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১, ২:০৭ অপরাহ্ণ

মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে নিয়ে ছোট্ট রুবিনার সংসার।পলিথিন, ছন ও খেড়ের বেড়া ও ছাউনী দেয়া ছোট কুঁড়ে ঘরেই নয় বছরের রুবিনার সংসার। এই ঘরে শুয়ে শুয়ে ছাউনির ফাঁকা দিয়ে দেখা যায় চাঁদের আলো। বিদ্যুতের আলো নেই তাদের ঘরে। তাই অমাবস্যার মতো ঘোর অন্ধকার ও এখন তার নিত্য সঙ্গী। বর্ষায় বৃষ্টির প্রথম ফোঁটায় প্রতিরাতেই বৃষ্টিস্লাত হয় সে।

কাঁদা ওস্যাঁতসেতে মাটির ঘরে পলিথিন বিছিয়ে ছেড়া কাপড়,কাঁথা বিছিয়ে শিকলবন্দী মাকে বুকে আগলে তার রাত কাটলেও দিনের যুদ্ধ শুরু হয় ফজরের আজানের পর পরই। রুবিনা সংসারে রয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন শিকলবন্দী মা, মানসিক ভারসাম্যহীন খালা ও সত্তোরোর্ধ নানী। তাদের পুরো পরিবারের দায়িত্ব তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীর রুবিনার ছোট্ট কাঁধে। রুবিনার স্বপ্ন একটি ঘরের আর মায়ের উন্নত চিকিৎসা করিয়ে মাকে সুস্থ করানো। কিন্তু রুবিনার সব স্বপ্নই যে স্বপ্ন হয়েই রয়ে যাচ্ছে।

নয় বছরের শিশু রুবিনার বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে। ভিটে মাটিহীন রুবিনার ঠাঁই হয়েছে এখন এই গ্রামের শহিদের পরিত্যাক্ত উঠানে একটি ছোট ঝুপড়িতে। দূর থেকে দেখতে গোয়াল ঘর মনে হলেও এই ঘরেই রুবিনার পরিবারের বসবাস।

ডলি বেগম রুবিনার না সাত বছর ধরে শিকল বন্দী ও মানসিক ভারসাম্যহীন।পঞ্চাশোর্ধ মানসিক ভারসাম্যহীন খালা ফাতেমা ও সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধা নানী আছিয়া বেগম এ নিয়েই নয় বছরেররুবিনা সংসার।

ফজরের আাজানের পর পর আলো ফুটতেই মাকে গাছের সাথে শিকলে বেঁধে, খালাকে ঘরে আটকে রেখে বৃদ্ধা নানীকে সঙ্গে নিয়ে কখনও এ গ্রাম কখনও ও গ্রামে দু’মুঠো ভাতের জন্য, কখনও মা-খালার চিকিৎসার টাকা জোগাড়ের জন্য মানুষ দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় । রুবিনার জন্মের আগেই তার বাবা নিরুদ্দেশ। শীতের কুয়াশার মত তার ভবিষ্যৎ ধোঁয়াশা হয়েই রয়ে গিয়েছে। পিতার আদর স্নেহ,ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত রুবিনাকেই এখন সামলাতে হচ্ছে তার পরিবারকে।

রুবিনা টিঙ্গিবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। রুবিনা ছোট্ট হাতে থাকার কথা ছিল বই খাতা, খেলনা। অবসরে সমবয়সীদের সাথে লেখা-পড়া ঘুরাঘুরি ও খেলা করার কথা ছিলো রুবিনাী। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাঁকে এখন রান্না থেকে শুরু করে গৃহস্থলীর সকল কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও করেনা পরিস্থিতির কারনে অবসর পেলেই বই খাতা নিয়ে বসে পড়ে ঘরের এক কোনায়। যখন মা বাঁধা থাকে পাশে গাছের সাথে শিকলে।

ভারসাম্যহীন মাকে খাওয়া থেকে শুরু করে গোসল ঘুম পাড়ানো সবই করতে হয় রুবিনার।পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে। দিনের কোন একসময় যখন খাদ্যের জন্য এ পাড়া থেতে পপাড়ায় যেতে হয় তখন মাকে ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে দড়জা বন্ধ করে যেতে হয় তাকে। তার ইচ্ছা মায়ের চিকিৎসা করানো। মায়ের থাকার জন্য একটি ঘর তৈরি করা। কিন্তু যেখানে দু মুঠো ভাতের জন্য এত সংগ্রাম করতে হয় রুবিনার সেখানে চিকিৎসা করাবে কীভাবে……?

রুবিনা সমবয়সী একজনের ঘরে টিভিতে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী গরীবদের অনেককে ঘর দিয়েছেন, চিকিৎসা করাচ্ছেন। কিন্তু তাদের ভাগ্যে কি প্রধানমন্ত্রীর আদর নেই। তার অসুস্থ মায়ের জন্য সে সব কিছু করতে পারে। মা ছাড়াতো তার আর কেউ নেই। তাইতো ছোট রুবিনা এই বয়সে কাঁধে তুলে নিয়েছে সংসারের ভার।

কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, রুবিনার পরিবারের দুঃখ কষ্টের কথা তারা জানতেন না। রুবিনার পরিবারকে আপাতত কিছু খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাদের থাকার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিবেন তারা। রুবিনার যাতে শিক্ষাজীবন ব্যহত না হয় এজন্য তাকে শিক্ষা বৃত্তি ও দেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!