ভারী বৃষ্টিপাত, তাপ, কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনিত রোগ ইত্যাদির মতো প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে নিরাপদে শাকসবজি ফলমূলসহ কৃষি উৎপাদন করার এক আধুনিক পদ্ধতি হলো পলিনেট হাউজ (গ্রীণহাউস) প্রযুক্তি। জমিতে লোহার পাইপের খুঁটির উপরে লোহার এঙ্গেল দিয়ে টার্চের ঘরের মত করে চারিদিকে পলিথিন দিয়ে তৈরি করা হয় পলিনেট হাউজ। পলিথিন এর নিচে সূর্যের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয় নেট। পলিনেট হাউজের ভেতরের তাপমাত্রা ও কৃত্রিম আবহাওয়ার পরিবেশ গড়ে তুলতে আরও ব্যবস্থা রাখা হয়। এ পদ্ধতিতে শীত, বর্ষা এবং গরমে তিন সিজনেই ইচ্ছামত সবজি চাষ করতে পারেন কৃষকরা।
প্রথমবারের মতো পাবনার ঈশ্বরদীতে পলিনেট হাউজ (গ্রীণহাউস) পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করা হলো। আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে উপজেলার বক্তারপুরে ২৫ শতক জমির উপর এ পলিনেট হাউজ স্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) দুপুর ১ টায় বক্তারপুর গ্রামে পেঁপে বাদশার কৃষি খামারে ফিতা কেটে এ পলিনেট হাউজের উদ্বোধন করেন প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ এসএম হাসানুজ্জামান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. সাইফুল, উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার, জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক (এআইপি) শাহাজাহান আলী (পেঁপে) বাদশা, সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মাহমুদা মুকমাঈনা সহ উপ সহকারী কৃষি অফিসারবৃন্দ ।
প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ এসএম হাসানুজ্জামান জানান, অসময়ে সবজি চাষের জন্য পলিনেট হাউজ দেশে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির নতুন সংযোজন। এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজিগুলো যেমন সহজেই গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যায় তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যাবে। পলিথিনের আচ্ছাদন থাকায় এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায় এবং অতি বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দূর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, এ পদ্ধতিতে উচ্চমূল্যের ফসল ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, রকমেলন, তরমুজ, ফুলকপি/বাধাকপি, লেটুস সহ অন্যান্য অফ সিজন সবজির পাশাপাশি সুস্থ সবল চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হবে। এর ফলে সবজি চাষে যেমন বৈচিত্র্যতা আসবে তেমনি আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান হবে।
জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক (এআইপি) শাহাজাহান আলী (পেঁপে) বাদশা বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আমার খামারে যে পলিনেট হাউজ স্থাপন করা হলো আমি এর সুষ্ঠ ও সঠিক ব্যবহার করার চেষ্টা করবো। যেন কৃষকরা এর সফলতা দেখে আগামী দিনে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেন।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. সাইফুল ইসলাম জানান, পলিনেটের সবচেয়ে উপকারী দিক হচ্ছে- এই সেটের নিচে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করতে হচ্ছে না। ফলে বিষমুক্ত সবজি পাওয়া যাচ্ছে। চারপাশে নেট ও উপরে পলি থাকার কারণে পোকা-মাকড় আক্রমণ করতে পারে না। আর পলিথিনের তাপমাত্রার কারণে প্রাকৃতিকগতভাবেই এখানে ইউরিয়া সার কম ব্যবহার করতে হচ্ছে। স্বল্প সার প্রয়োগ করেই পলিনেটে হাউসে সবজি উৎপাদন করতে পারায় তা খুবই লাভজনক।
গবেষণায় দেখা গেছে পলিনেট হাউজে ফসলের উৎপাদন ২০% বাড়ে। পাশাপাশি পোকামাকড়ের আক্রমন ৭০% কম হয়। প্রাথমিকভাবে খরচ কিছুটা বেশি হলেও এতে উৎপাদন খরচ কম হয়। পলিনেট হাউজের সুষ্ঠ ও সঠিক ব্যবহার করতে পারলে কৃষকদের মাঝে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।