রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ

বিএসআরআই পরিচালক (টিওটি) ড. ইসমাৎ আরা’র বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ  কৃষি মন্ত্রনালয়ে

ঈশ্বরদী, পাবনা প্রতিনিধি / ২৪৭ বার পঠিত
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৪, ১১:২১ পূর্বাহ্ণ

কৃষি মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে বিএসআরআই এর পরিচালক (টিওটি) ড. ইসমাৎ আরা’র বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী মনোভাব পোষণ, সরকারি কার্যক্রমের নেতিবাচক সমালোচনা, দায়িত্ব পালনে অসহযোগিতা ও অনীহা প্রকাশ এবং সরকারি বিধি-বিধান অমান্য করার প্রবণতা বিষয়ে একাধিক অভিযোগ গিয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৮তম শাহাদৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা আহ্বান করেছিল বিএসআরআই কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ড. মোছা. ইসমাৎ আরা কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে সভায় অনুপস্থিত থাকেন। এটা বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা ও অবজ্ঞা করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনে অবহেলার বহিঃপ্রকাশ বলে বিএসআরআই কর্তৃপক্ষ মনে করছেন।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ড. মোছা. ইসমাৎ আরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকা অবস্থায় ছাত্রদলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। সেসময় জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী’র বাড়িতে তিনি যাতায়াত করতেন এবং সেই সুবাদে দাপট দেখিয়ে প্রভাব বিস্তার করতেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে নিজের পরিচয় লুকিয়ে পদোন্নতি পেতে আওয়ামী লীগের সমর্থনকারী সাজেন। বর্তমানে তিনি পরিচালক (টিওটি) পদে রয়েছেন। উক্ত পদে যোগদানের পর হতেই বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত বিজ্ঞানীদের পক্ষে এবং বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। তিনি প্রতিনিয়তই বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে থাকেন। সম্প্রতি তিনি তার ফেসবুক আইডি’তে “বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে কেউ কথা বলছে না” শিরোনামে একটি সরকার বিরোধী পোস্ট শেয়ার করে স্থানীয়ভাবে চরম বিতর্কিত হয়েছেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর হতে ১৯৯০ সালের ৬ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের সংবিধানকে উপেক্ষা করে কারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল?’ এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইসমাৎ আরা’র ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে ক্লাসে দাঁড়িয়ে উত্তর দেয় ‘শেখ হাসিনা’। এরুপ অপ্রাসঙ্গিক উত্তরের ফলে শ্রেণি কক্ষে তর্ক বিতর্ক ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, তার পরিবারে বর্তমান সরকার বিরোধী সমালোচনা হয়।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ড. ইসমাৎ আরা প্রায়ই কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহার করেন। গাড়ির অধিযাচন এর অনুমতি গ্রহণ না করে প্রায়ই ভ্রমণ করেন। গত ২১ অক্টোবর’২৩ বিনা অনুমতিতে ব্যক্তিগত কাজে চাটমোহর যাওয়ার জন্য অফিসের গাড়ি ব্যবহার করেছেন। তিনি মাসে সর্বোচ্চ ২’শ লিটার জ্বালানী তেল কিংবা ৩’শ ঘনমিটার সিএনজি জ্বালানী ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু অধিকাংশ মাসেই তিনি প্রায় দ্বিগুনের বেশি জ্বালানী ব্যবহার করেছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সরকারি কাজ দেখিয়ে ব্যক্তিগত কাজে মাসিক ১২২ ঘন্টা গাড়ি ব্যবহার করেছেন। তার এধরনের স্বেচ্ছাচারি কর্ম এবং গাড়ি ব্যবহারের যথার্থতার বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ তেল জ¦ালানী অর্থ জমাদানের জন্য বলা হলেও তিনি আমলে না নিয়ে তাচ্ছিল্য করে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ড. ইসমাৎ আরা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন না। প্রতিষ্ঠানের জার্নাল কমিটি পুন:গঠন করা ও নিয়মিত প্রকাশনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ২০২২-২০২৩ রোপন মৌসুমের জন্য মনিটরিং কমিটি গঠন করা, প্রতিষ্ঠানের বিভাগসমূহের মাসিক আভ্যন্তরীণ সেমিনার আয়োজন করা, প্রযুক্তি হস্তান্তর কার্যক্রমের নিমিত্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান গেটের বাহিরে প্রযুক্তির তথ্য সম্বলিত বিল বোর্ড স্থাপন এবং প্রতিষ্ঠানের বাউন্ডারি ওয়ালে প্রযুক্তি সংক্রান্ত তথ্য লিখন, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের ছবি উত্তোলন ও সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা তার দায়িত্ব। শুধু একটি সেমিনার আয়োজন ব্যতিত আর কিছু করেননি।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ড. ইসমাৎ আরা তার অধিনে ন্যাস্ত প্রতিষ্ঠানের খামারের জমি যথাযথভাবে পরিদর্শন করেন না। খামারের মেরামতযোগ্য কৃষি যন্ত্রপাতি মেরামতেরও উদ্যোগও নেন না। এতে বর্তমান রোপন মৌসূমে খামার বিভাগের সার্বিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। যথাসময়ে সার ক্রয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ায় আখের গবেষণাসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
বিএসআরআই ক্যাম্পাসে বসবাসরত বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত বাসাগুলো সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক প্রতিটি বাসার চৌহদ্দি নির্ধারণ বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ড. মোছাঃ ইসমাৎ আরা।
বাসার চৌহদ্দি নির্ধারণ কমিটি কর্তৃক ১৬/১১/২০২৩ তারিখের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তিনি আজ অবধি তা করেননি।
ড. ইসমাৎ আরা গত ০৭/১২/২০২৩ তারিখ হতে কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এতে বর্তমান আখ রোপন মৌসুম ২০২৩-২০২৪ এ তার অধীন গবেষণা বিভাগ/উপকেন্দ্রসমূহের গবেষণা কার্যক্রমসহ অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ মারাত্মকভাবে ব্যহত ও হুমকীর সম্মুখীন হচ্ছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিএসআরআইতে প্রায় ৫০জন শ্রমিক নিয়োগ হলে ড. ইসমাৎ আরা নিয়োগের বিরুদ্ধে পুরাতন শ্রমিকদের আন্দোলন করার জন্য শ্রমিক নেতাদের উস্কানি দেন। যা একজন কর্মকর্তা হয়ে কোনো ভাবেই তিনি পারেন না। এটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার অপরাধ।
মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি ছাড়া মন্ত্রনালয়ে যাওয়া নিষেধ থাকলেও নির্দেশনা উপেক্ষা করে তিনি প্রায়ই বিনা কারণে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও ছুটি ছাড়াই বিভিন্ন সময় মন্ত্রণালয়, জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেমের আওতাভূক্ত বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের র্শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে স্বাক্ষাত করে প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য অপপ্রচার করে থাকেন।
সরকার বিরোধী মনোভাব, সরকারি কার্যক্রমের নেতিবাচক সমালোচনা, দায়িত্ব পালনে অসহযোগিতা ও অনীহা এবং সরকারি বিধি-বিধান অমান্য করার প্রবণতার বিষয়ে ড. ইসমাৎ আরাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ। তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই দিবো। আমার মেয়ে ছোট মানুষ এবং অন্য মনষ্ক ছিল বিধায় প্রশ্ন না বুঝেই উত্তর দিয়েছে আর আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল। গাড়ি প্রয়োজনেই ব্যবহার হয়, জ¦ালানী খরচ কমবেশি হলে হতেও পারে, সেটি আমি অবগত নই। বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত প্রসঙ্গে আমার উত্তর হলো- আমি অসুস্থ ছিলাম। ডিজি স্যারও ঈশ^রদীর বাইরে ছিলেন। তারপর ছুটির আবেদন ডিজি স্যার বরাবর করা হয়েছিল। তবে হ্যা, তিনি পরে এসে সেটি আর অনুমোদন করেননি।
সৃষ্ট পরিবেশ প্রসঙ্গে কয়েকজন বিজ্ঞানীর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, দু’জন পরিচালকের মধ্যে একজন ড. কুয়াশা মাহমুদ স্যার যিনি শারিরীক ভাবে অসুস্থ্য। অপরজন ড. মোছাঃ ইসমাৎ আরা ম্যাডাম। তিনি পরিচালক প্রযুক্তি ও হস্তান্তর হওয়ায় তাকে প্রযুক্তি ও হস্তান্তর বিষয়ক কার্যক্রম যেমন- প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিলবোর্ড, দেয়াল লিখন, নিয়মিত জার্নাল প্রকাশনা, মাসিক সেমিনার আয়োজন, মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের সমস্যা এবং সমাধানের বিভিন্ন কৌশল, বিভিন্ন উপকেন্দ্র ও আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্রের সমস্যা সমাধান করা তার দায়িত্ব কিন্তু তিনি তা করেন না। ম্যাডামের দায়িত্বে অবহেলা, মিথ্যাচার এবং বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, কর্মপরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারি, শ্রমিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানে স্থবিরতার সৃষ্টি হচ্ছে। মহাপরিচলক ড. মো. ওমর আলী স্যার জুনিয়র বিজ্ঞানীদের নিয়ে কাজ করছেন ঠিকই তবে হিমশিম খাচ্ছেন।
মহাপরিচালক ড. মো. ওমর আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!