মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের উত্তর চৈল্লা গ্রামে স্ত্রীর পরকীয়ার ঘটনায় অপমানিত হয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন স্বামী ফজলুল হক ফজা। এই আত্মহত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই করা হয়েছে লাশ দাফন। এ নিয়ে এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন।
নিহত ফজার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে একই গ্রামের ইউনুছ মোল্লার সাথে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত থাকায় স্ত্রী তার স্বামী ফজাকে কখনোই মূল্যায়ন করেনি। নিহত ফজা জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার সুবাদে ইউনুছ মোল্লার সাথে পরকীয়া সম্পর্কে আসক্ত হয়ে পড়েন তার স্ত্রী।
পরকীয়া প্রেমিক ইউনুছ সম্পর্কে নিহত ফজার বেয়াই। ইউনুছ ও ফজার স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্ক একাধিকবার ফজার কাছে হাতেনাতে ধরা পড়লে এ নিয়ে নিহত ফজা ও তার স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এরপরও ফজার স্ত্রী পরকীয়া সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকলে গত ০৮ আগস্ট রাতে পুনরায় স্ত্রীকে ইউনুছের সাথে নিজ বাড়িতে অসামাজিক কাজের সময় দেখে ফেলে।
তখন ফজা তার স্ত্রীর পায়ে ধরে অনুরোধ করে বলে শেষ বয়সে আমাকে আর সমাজের কাছে ছোট করিওনা। তুমি এ ধরনের নোংরা কাজ আর করিওনা। এতে ফজার স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে ফজাকে লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দেয়।
পরে কথিত প্রেমিক ইউনুছ ও স্ত্রী মিলে রাতে ফজাকে আরো মারধর করে। এর পরদিন ৯ আগস্ট সকালে বাঘিয়া বাজারে এলাকার সমবয়সী লোকদের কাছে তার এই করুণ কাহিনীর বর্ণণা করে।
এর কিছুক্ষণ পর এলাকাবাসী খবর পায় ফজা মারা গেছে। এলাকাবাসী গিয়ে তার মরদেহ বাড়ির পাশের একটি বাঁশঝাড়ের পাশে পড়ে থাকতে দেখে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হলে নিহত ফজাকে হাসপাতালে না নিয়ে রাস্তা থেকেই ফেরত নেওয়া হয় বাড়িতে।
এরপর তড়িঘড়ি করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশের দাফন করতে মরিয়া হয়ে পড়েন স্ত্রী ও কথিত প্রেমিক ইউনুছ মোল্লা। বাড়িতে স্বামীর লাশ রেখে স্ত্রী প্রায় দুই ঘন্টা সময় নিয়ে স্থানীয় মেম্বার ইদ্রিস আলী ও বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম সেন্টুকে দিয়ে নিহত ফজার স্বজনদের চাপ সৃষ্টি করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনে বাধ্য করে।
ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের দায় এড়াতে ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী ও বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম সেন্টু দুজন দুজনকেই দোষারোপ করছে। প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় মেম্বার ইদ্রিস আলী ও বিএনপি নেতা সেন্টু নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসী জানায়, নিহত ফজার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে ইউনুছ মোল্লার সাথে পরকীয়া সম্পর্কে লিপ্ত। ফজার এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য তার স্ত্রী ও কথিত প্রেমিক ইউনুছ মোল্লা দায়ী। এ কারণে স্থানীয় মেম্বার ও বিএনপি নেতা প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন সম্পন্ন করে।
বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ঘটনার দিন খবর পেয়ে আমি লাশ দেখতে গিয়েছিলাম। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের বিষয়টা আমি জানিনা। এটা জানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী বলেন, নিহত ফজা দীর্ঘদিণ ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। এ নিয়ে তার পরিবারে ঝামেলা চলছিল। ঘটনার দিন খবর পেয়ে আমি লাশ দেখতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম লাশ দাফনের প্রস্ততি চলছে তাই বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি। ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের বিষয় বিএনপি নেতা সেন্টু জানে। সে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের বিষয়ে প্রশাসনের সাথে কথা বলেছে।
নিহত ফজার স্ত্রীর সাথে কথা বলার জন্য এলাকায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ভাড়ারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, ফজার মৃত্যুর খবর শুনে ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী ও গ্রামপুলিশ জোগেশকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলাম। কিন্ত এরা দুজন আমাকে কোনকিছু জানায়নি। আমাকে জানালে অবশ্যই আমি প্রশাসনকে অবগত করতাম। যেহেতু পারিবারিক কলহের জেরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে সেক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফন করা ঠিক হয়নি। আমি এর সুষ্ঠু তদন্তে দাবি করছি।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে আমাদের কেউ অবগত করেনি। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগও করেনি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।