উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বেড়েই চলেছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে জেলার কাজিপুর পয়েন্টেও যমুনার পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সকালে যমুনা নদীর হার্ডপয়েন্ট এলাকায় পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪৪ সেন্টিমিটার।
কাজিপুর পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিরাজগঞ্জের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বেড়েছে ২১ সেন্টিমিটার।
তবে এখনো বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। গত সপ্তাহে অতিরিক্তভাবে পানি বাড়তে থাকলেও গত দু’দিন থেকে পানি বাড়ার হার কিছুটা কম রয়েছে।
পাউবো সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জাগ্রত সকালকে জানান, ১০-১২ জুলাই পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকবে। এরপর আবার কমতে থাকবে।
যমুনার অব্যাহত ভাঙনে পাল্টে গেছে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের খাষ ঘুণি পাড়া ও খাষ তেবাড়িয়া গ্রামের মানচিত্র।
চারপাশে এখন শুধু পানি আর পানি।
এখানে ছিল ফসলের মাঠ, বসতবাড়ি খেলার মাঠ, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব কিছু বিলীন হয়ে গেছে যমুনার ভাঙনে।
ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ। সরেজমিন খাষ ঘুণি পাড়া ও খাষ তেবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, শতশত একর ফসলি জমি, ঘর বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান এরই মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অনেকেই তাদের ঘর বাড়ি, গাছপালা ও গবাদিপশু অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকেই আবার তাদের ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি।
এদিকে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইকশা মাইঝাইল, খাষ ঘুণি পাড়া, খাষ তেবাড়িয়া, চর সলিমাবাদ, ভূতের মোড়, ভারড়া ইউনিয়নের শাহজানি, মারমা, পাঁচতারা, আগদিঘলীয়া, উলাডাবের রাস্তা, বাজারঘাট ও ঘর বাড়ি যমুনার ও ধলেশ্বরীর ভাঙনের কবলে পড়েছে।
খাষ তেবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মো. দানেজ শেখ জানান, দুই বছরে তিনি ছয় বার ঘর সরিয়ে নিয়েছেন। এখন তার আর যাবার কোনো জায়গা নেই।
তেবাড়িয়া ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি (ইউনিয়ন পরিষদ) সদস্য মো. রাজা মিয়া জানান, তার ওয়ার্ডে দুই হাজার ৭৭৫ ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে অর্ধেক ভোটার নদী পাড়ের। যমুনার ভাঙনের কারণে ঘরবাড়ি নিয়ে তারা একটু আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছেন। তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে সরকারের কাছে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সোলায়মান ভূইয়া জাগ্রত সকালকে জানান, ভাঙন রোধে সাময়িক ইমার্জেন্সি কাজ চলছে। তবে এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। ভাঙন ঠেকাতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিকল্প নেই।