কোভিড-১৯ সংক্রামনের ফলে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ৩০ জুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। সংক্রমণের বৃদ্ধির কারনে আগামী সোমবার (২৮ জুন) থেকে সারাদেশ চলবে কঠোর লকডাউন। এ অবস্থায় আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা বিষয়টি।
করোনা সংক্রামণ বৃদ্ধি পাওয়াই ফের কঠোর লকডাউনের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটির সময়সীমা বৃদ্ধি করা পারে বলে জানিয়েছে,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই সরকারের ওপর মহলে এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা বিপদজনক।শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, করোনা সংক্রমণের হার ক্রমশ্য বাড়েই চলেছে। গতকাল ২১ শতাংশের বেশি ছিল। ৫ শতাংশের নিচে না নামা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে না। ৩০ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে পরিস্থিতি বুঝে শুনেই শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধান্ত জানাবেন। সিদ্ধান্তের জন্য কয়েকদিন সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।
গত কাল শুক্রবারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে যে , গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২৮ হাজার ২৪৭ জনের। মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৭ হাজার ৬৫৩টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ পর্যন্ত দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ১১৯টি। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনে কাছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “পরিস্থিতি অবনতি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা কাউকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাই না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে চলমান ছুটি আরো বাড়ানো হতে পারে”।
অপরদিকে আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেছেন যে, “সরকারের ঘোষনা দেওয়া তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। সরকারের নির্দেশনা পেলেই প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে। তবে সবকিছু এখন নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর”।
আগামী সোমবার (২৮ জুন) থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সাতদিনের জন্য সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে। এসময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে। জরুরি কারণ ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবেনা। বিধিনিষেধের বিষয়ে আরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে বিস্তারিত জানিয়ে আজ শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আদেশ জারি করা হবে।
লকডাউনের সময় সোমবার(২৮ জুন)থেকে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহনের চলাচল বন্ধ থাকবে। অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যববহৃত যানবাহন শুধু চলাচল করতে পারবে। গণমাধ্যম ও এ বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকবে।
২০২০সালের ৮ই মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় খবর । এরপর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য দেয় সরকার। এরপর সরকার ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে আবার করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলে সরকার এপ্রিল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বিধি-নিষেধ জারি করে। সম্প্রতি সীমান্তে করোনার তীব্র সংক্রমণ শুরু হলে বিভিন্ন জেলায় লকডাউন জারি করা হয়। ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন রাখতে কয়েক দিন আগে আশপাশের সাত জেলায় কঠোর বিধি-নিষেধ পর্যন্ত আরোপ করা হয়।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি এমন অবস্থায় করোনা সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে বুধবার সরকার গঠিত বৈঠক করে কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে সব মানুষকে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য ঘরবন্দি রাখার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। আর সেই কৌশলকেই পরামর্শ হিসেবে গ্রহণের জন্য জানিয়ে দিয়েছে সরকারকে।
কমিটির সভায় এমন কঠোর পদক্ষেপকেই ‘শাটডাউন’ শব্দে প্রকাশ করা হয়েছে। এখন ওই ‘শাটডাউন’ কেমন হবে, তা নিয়েই চলছে মানুষের মনে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা ও কৌতূহল। এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার গণমাধ্যমকে সারা দেশে কঠোর লকডাউনের তথ্য জানান। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে সাত দিনের জন্য কঠোর লকডাউন কার্যকরের জন্য পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সকলে মাঠে থাকবেন।