২০০৩ সালের ১৭ আগস্ট থেকে ঢাকা-খুলনা রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও ২০১৯ সালের ১৭ই জুলাই থেকে ঢাকা-বেনাপোল রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস নামে দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আন্তঃনগর এই ট্রেন দুটির কারনে যেমন ঢাকার সাথে খুলনা কিংবা যশোরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়েছিল, তেমনি ঈশ্বরদী সহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ঢাকা ও খুলনা যাতায়াতের নিরাপদ ও জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল এই ট্রেন দুইটি।
সাম্প্রতি পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করার পরই বদলে গেছে আন্তঃনগর এই ট্রেন দুইটির চলাচলের রুট। আগামী ১ নভেম্বর থেকে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ (৭২৫) ও ২ নভেম্বর থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস’ (৭৯৫) পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন রুটে যাত্রা শুরু করবে বলে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিন্টেনডেন্ট মো. আব্দুল আওয়াল স্বাক্ষরিত এক দপ্তারাদেশ প্রকাশ করা হয়। এতে আগামী সপ্তাহ থেকে ঈশ্বরদীবাসী সহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এই ট্রেন দুইটির সেবা থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে।
এমন নির্দেশনা প্রকাশের পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ঈশ্বরদীর মানুষ। এদিকে বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকালে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন ও শহরের প্রধান ফটকে বিভিন্ন ব্যানারে মানববন্ধন করে সাধারন মানুষ। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ঈশ্বরদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি আসাদুর রহমান বিরু, ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক (জিএস) মাসুদ রানা, যুবলীগ নেতা মিলন চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক ববি সরদার, ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ কিরণ, সহ-সভাপতি খন্দকার মাহবুবুল হক দুদু, সাংবাদিক সংস্থা ঈশ্বরদী সাংগাঠনিক ইউনিটের সভাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ, সাঁড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রশিদ, উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মুকুল হোসেন সহ অন্যান্যরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ব্রিটিশ আমলে তৈরী ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন দেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী জংশন স্টেশন। রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঈশ্বরদী ইপিজেড সহ বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান সহ ভৌগলিক কারনে ঈশ্বরদী একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। রাজধানী ঢাকার সাথে ঈশ্বরদীর মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজতর করেছিল সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস নামের আন্তঃনগর দুইটি ট্রেন। গুরুত্বপূর্ণ এই ট্রেন দুইটির রুট পরিবর্তনের ফলে ভোগান্তিতে পড়তে যাচ্ছে ঈশ্বরদীবাসী। এজন্য ঈশ্বরদীর জনপ্রতিনিধিসহ দায়িত্বশীলদের দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারন মানুষ। তাই সুন্দরবন ও বেনাপোল ট্রেনের রুট পরিবর্তনের আগে ঈশ্বরদী থেকে ঢাকা রুটে নতুন কোনো ট্রেন সার্ভিস চালু করতে রেলকর্তৃপক্ষ সহ প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন তারা।
তবে ঈশ্বরদীবাসীকে আশ্বস্ত করে বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সূফি নুর মোহাম্মদ জানান, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট পরিবর্তনের কারণে ঈশ্বরীবাসীর মনে হতেই পারে তারা সুবিধা বঞ্চিত হবেন। তবে তাদের আশ্বস্ত করতে চাই রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি আগে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনে থামতো না তবে এখন থেকে ট্রেনটি বাইপাস স্টেশনে থামবে। এতে করে ঈশ্বরদীবাসী রাত দুইটার পরিবর্তে এখন রাত সাড়ে বারোটায় ঢাকা যেতে পারবে। আবার বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৫ মিনিট পর পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাইপাস স্টেশন হয়ে ঢাকা যায়। এতে করে বেনাপোলের যাত্রীগণ পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতি চালু হওয়ার চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি আপ এবং ডাউনে বাইপাস স্টেশনে থেমে ঢাকায় চলাচল করে সেই ট্রেনেও তারা যাতায়াত করতে পারবে। তাছাড়াও বর্তমানে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ভাঙা পর্যন্ত বর্তমানে চলাচল করছে যা আগামীতে ঢাকা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার চিন্তাভাবনা রয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে ঈশ্বরদীবাসী পদ্মা সেতু হয়েও ঢাকা চলাচল করতে পারবে। আর পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হলে তা ঈশ্বরদী দিয়েই ঢাকায় নেয়া হবে। সুতরাং ঈশ্বরদী বাসীর হতাশ হওয়ার কিছু নেই।