‘সকাল বিকাল প্যাডেল মারি, ঝড়ে কত ঘাম। সভ্যতাকে টেনে বেড়ায়, পায়না কোনো দাম। লাঞ্চনা-বঞ্চনা সহে, ছুটি চলি যাত্রী লয়ে…শোন এক ভ্যান চালকের জীবন কাহিনী’ নাম তার মুনিশ চন্দ্র রায় নটে। হাটিহাটি পা-পা করে ৫৫ এর ঘরে পা দিয়েছে বয়স। যে বয়সে একজন মানুষ আরাম আয়েশ করবে। নাতি নাতনির সাথে হাসি তামাশা আর আড্ডাই মেতে থাকার কথা।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বয়সের ভারত্ব নিয়ে দারিদ্রতার কাছে হার মেনে প্রতিদিন ভ্যানের প্যাডেল ঘুরিয়ে নিজের ও পরিবারের অন্ন যোগাতে হয়। এই বৃদ্ধ বয়সে ভ্যান চালাতে চাইলেও চালাতে পারে না মুনিশ। কিন্তু আধুনিকতায়ও ফাটল ধরেছে মুনিশ চন্দ্রর জীবনে। যুগের পরিবর্তন হলেও, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বদলায়নি মুনিশ এর জীবনে। ফলে যুগোপযোগী ভ্যান না থাকায় কচ্ছপ গতির পায়ে চালিত গাড়ীতে কয়েকজন শখ করে ছাড়া কেউ উঠে না। তার বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতী ইউনিয়ন এর তালুক শাখাতী গ্রামে। তার পিতার নাম মহেশ চন্দ্র রায়।
তার সাথে কথা বলে জানা যায়, সে কালীগঞ্জ উপজেলাধীন চামটাহাট এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ভ্যান চালান। দিনে একশত থেকে দেড়শত টাকা আয় করেন তিনি। এদিয়ে ৫ সদস্যের সংসার চালিয়ে নিতে হয় মুনিশকে। তিনি বলেন, প্রতিদিন ভ্যান চালাতে পারিনা, বৃদ্ধ বয়সে কখনও অসুস্থ থাকি কখনও আবহাওয়া খারাপ থাকে আবার কোনো দিন ভাড়াই হয়না।
আধুনিক যুগে সব ক্ষেত্রেই তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তির ছোয়া লেগেছে। আর তার প্রভাব পড়েছে রিক্সা বা ভ্যান গাড়িতেও। বর্তমানে এলাকার সব ভ্যান গাড়িতেই মটর লাগানো। ফলে ভ্যান চালকের তেমন কষ্ট হয়না, কম সময়ে বেশি ভাড়া মারা যায়। এখন মানুষ সময়ের দাম দিতে শিখেছে তাই সবাই অটো ভ্যানে যাতাযাত করে, মালামাল বহন করে। কিন্তু দারিদ্রতার অভিশাপের অভিশাপ্ত হয়ে অর্থের অভাবে এখনও ভ্যানে মটর লাগাতে পারিনি। ফলে সাধারণ জনগণ আমার ভ্যানে উঠতে চায় না বা মালামাল বহন করে নিতে চায় না।
মুনিশ বলেন, যদি স্থানীয় কোনো প্রভাবশালী বা জেলা প্রশাসক বা ইউএনও সহ কেউ যদি আর্থিক সাহায্য করত তাহলে ভ্যানে মটর লাগিয়ে এই বৃদ্ধ বয়সে ভ্যান চালিয়ে জীবন যুদ্ধ চালিয়ে নিতাম।