শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ
ঈশ্বরদীতে বাবার হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সন্তানদের আহাজারি  ঈশ্বরদীতে মাটির পুতুল পোড়াতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ স্কুল শিক্ষার্থী  ঈশ্বরদীতে পুকুরে গোসলে নেমে শিক্ষার্থীর মৃত্যু রায়পুর মানব কল্যাণ সংস্থার  ইফতার ও ঈদ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত  জীবনের জয়গান মানব কল্যান সংস্থার উদ্যোগে ঈদ উপহার বিতরণ ক্লাব আইজিয়ান এর উদ্যোগে ইফতার মহফিল অনুষ্ঠিত  আওয়ামীলীগ হত্যায় উৎসাহী দল– ঈশ্বরদীতে রুহুল কবির রিজভী  ঈদ উপলক্ষে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের বিশেষ মহড়া  ঈশ্বরদীতে শিক্ষার্থীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়তে চান মরিয়ম বেগম

একজোড়া জুতা কাহিনি

জাগ্রত সকাল ডেস্ক / ১৭৭ বার পঠিত
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন, ২০২১, ১১:০৭ অপরাহ্ণ

খান মুহাম্মদ রুমেল

মাঝে মাঝে কোনো কাজ থাকে না হাতে। চাইলেই প্রিয় কোনো বইয়ে ডুব দেওয়া যায়। টুকটাক লেখার চেষ্টাও করা যায়। ফেসবুকিং করা যায়। ইউটিউবে নাটক-সিনেমা দেখা যায়। কারো সঙ্গে গল্প করা যায়। ফোনে কথা বলা যায়। কিন্তু এসবের একটাও ভালো লাগে না। কিছু একটা করতে মন চায়। কী যে করতে হবে, সেটা বোঝা যায় না। ফলে আরও অস্থির লাগতে শুরু করে। আর এমনটা ঘটে বেশিরভাগ সময় বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা মেলার আগের যে সময়টা—তখন। সেদিন আমার এমনই লাগছিল। বসে ছিলাম নিজের ঘরে খুব মন খারাপ করে। এমন সময় দরজা ঠেলে উঁকি দেয় সোহরাব।

বিনয়ে প্রায় গলে গিয়ে বলে, ‘ভাই আসতে পারি?’ আসতে বলতে মন চায়, আবার চায়ও না। হ্যাঁ এবং না এর মাঝামাঝি একটি শব্দ উচ্চারণ করি। সোহরাব সেটাকে ইতিবাচক ধরে নিয়ে ঢুকে পড়ে ঘরে। আলগোছে বসে সামনের চেয়ারটায়। কী বলবো তাকে বুঝে উঠতে পারি না। কোনো কথা বলে না সেও। দুজন লোক তো আর চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। সোহরাব এমনিতেই একটু লাজুক। তার ওপর আমার নীরবতায় আরও দমে যায় সে। হুঁট করে আমার ঘরে ঢুকে এখন আবার বের হয়ে যেতেও পারছে না। আবার বসে থাকতেও সঙ্কোচ হচ্ছে। বুঝতে পারি আমি। ওকে একটু সহজ করার জন্য গল্প জমানোর চেষ্টা করি আমিই।
– তারপর সোহরাব, মেয়ে কেমন আছে?
বছর দেড়েকের একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে ওর। মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে আড়ষ্ট ভাবটা কাটতে পারে ওর, ভেবেই প্রশ্নটা করা। টেকনিকে কাজ হয়। চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার।
– জ্বি ভাই, আছে ভালোই। তবে অনেক দিন হলো দেখি না মেয়েটাকে।
– কেন? দেখো না কেন?
– সেই যে লকডাউনে ময়মনসিংহ মামার বাড়ি গেল, আর তো ফিরতে পারে নাই।
– ও আচ্ছা।
এরপর বলার মতো আর কিছু খুঁজে না পেয়ে চুপ করে থাকি আমি। চুপ করে থাকে সোহরাবও।

ততোক্ষণে দমবন্ধ করা অস্থির ভাব কিছুটা কাটতে শুরু করেছে আমার। মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ গল্প করা যায় সোহরাবের সঙ্গে।
– তার মানে তো বউও বাসায় নেই!
এবার কোনো কথা বলে না, ম্লান হাসে সোহরাব।
এমন সময় হৈ হৈ করে ঘরে ঢোকে রফিক। একদণ্ড চুপ করে থাকতে পারে না রফিক। জর্দা দিয়ে পান খায় সারাক্ষণ। ফলে রফিক যেখানেই যায়, সঙ্গে থাকে একরাশ সুগন্ধি জর্দার সৌরভ।
– আরে সোহরাব যে! তা কী নিয়ে গল্প হচ্ছে জাহিদ ভাই?

আমার নাম ধরে ডাকায় বুঝতে পারি প্রশ্নটা আমাকেই করেছে রফিক।
– না, কোনো গল্প না। এমনিই বসে ছিলাম জাহিদ ভাইয়ের এখানে।
আমি কিছু বলার আগেই উত্তরটা দিয়ে ফেলে সোহরাব।
– ও আচ্ছা! সংক্ষিপ্ত উত্তর রফিকের। যেটা তার স্বভাবের সঙ্গে একেবারেই যায় না।
– না, সোহরাবের বাচ্চাটা না-কি অনেক দিন হলো মামার বাড়িতে আছে। এ নিয়েই কথা হচ্ছিল। কিছুটা কৈফিয়তের মতো শোনায় আমার গলাটা। যেন সোহরাবের বউ-বাচ্চা শ্বশুরবাড়িতে পড়ে থাকার দায়টা আমারই।
– ওহ, এই কথা? তা, সোহরাবের বিয়েটা কেমন করে হয়েছিল জানেন না-কি জাহিদ ভাই?
– না, জানি না তো! কিভাবে হয়েছে? উত্তর দিই রফিককে।
আর আড়চোখে সোহরাবের দিকে তাকাই। লাজুক সোহরাব যেন মিশে যেতে চাইছে মাটির সাথে।
– কি শুরু করলেন রফিক ভাই। প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে সোহরাব।

কিন্তু প্রগলভ রফিক কি আর শোনে সোহরাবের কথা। বলেই চলে সে, ‘শোনেন জাহিদ ভাই, সোহরাব তখন থাকে মিরপুরে তার মামার বাসায়। প্রতিদিন বাসায় ঢোকার সময় পাশের ফ্ল্যাটের দরজায় এক জোড়া স্যান্ডেল দেখে। কিন্তু স্যান্ডেল পরা মেয়েটাকে দেখতে পায় না একদিনও। অথচ মেয়েটাকে দেখার জন্য মনটা আকুলি-বিকুলি করে ওর। কিন্তু দেখা মেলে না স্যান্ডেলওয়ালীর। এভাবে কেটে যায় কয়েক মাস। এর মধ্যে স্যান্ডেল জোড়া বদল হয়েছে। ধরেন আগে ছিল চটি জুতো, এখন হয়তো থাকে হাইহিল। কিংবা পুরোনো চপ্পলের জায়গায় এসেছে নতুন চপ্পল। জুতা বদল বলেও জুতার মালিক যে একজনই—তা বুঝতে অসুবিধা হয় না সোহরাবের। কিন্তু যে মেয়েটি পরে এই জুতা, তার দেখা নাই। একসময় অস্থির হয়ে মামার বাসা ছেড়ে মেসে উঠে যায় সোহরাব। এদিকে মামা-মামি ছাড়বে না তাকে! মামির এককথা, এখানে থাকতে কী অসুবিধা তোর? আমাকে আগে বোঝাতে হবে। তারপর মেসে উঠবি। এখন সোহরাব কী করে তার মামিকে বোঝায়—একজোড়া জুতার মালিককে দেখতে না পেয়ে বাসা ছেড়ে চলে যাবে সে! যা-ই হোকা, বেশ কিছুদিন তর্ক-বাহাসের পর দফারফা হয়। বাসা ছেড়ে মেসে উঠে যায় সোহরাব। বুঝছেননি জাহিদ ভাই, ঘটনা কিন্তু শুরু হয় এইখান থেকেই।’

একনাগাড়ে অনেকক্ষণ কথা বলার পর গলাটা বোধহয় শুকিয়ে যায় রফিকের। একটু পান মুখে দেয় সে। মৌ মৌ জর্দার গন্ধটা নাকে এসে লাগলেও কিছু বলি না রফিককে। আসলে বলা যায় না—এ ধরনের মিশুক এবং আড্ডাবাজ প্রকৃতির লোককে কেউই বোধ হয় বলতে পারে না কিছু।
– কোথায় যেন ছিলাম জাহিদ ভাই? পান খেতে খেতে জিজ্ঞেস করে রফিক।
– ওই যে সোহরাব, মেসে উঠে গেল মামার বাসা ছেড়ে।
– এই তো, মনে আছে দেখি আপনের!
বাচ্চাদের মতো খুশি খুশি গলায় রফিক। শোনেন তাহলে পরের কাহিনি, ‘সোহরাব যেদিন মেসে উঠে গেল নাকের জল চোখের জল এক করে, তার ঠিক তিন দিন পরের ঘটনা। এক অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে ওর কাছে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে এক অচেনা নারীকণ্ঠ বলে, কী ব্যাপার? কিছু না বলে চলে গেলেন যে আপনি?’
– বুঝলেন কিছু জাহিদ ভাই? যেই স্যান্ডেলওয়ালীকে দেখতে না পাওয়ার বেদনায় মামার বাসা ছেড়ে চলে এসেছিল সোহরাব; সেই মেয়ে ফোন করেছে তাকে। সেই মেয়েই এখন তার বউ!

কথার এ পর্যায়ে আচমকা ফোনটা বেজে ওঠে রফিকের। হ্যালো হ্যালো করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে যায় সে। আর আমি তাকাই সোহরাবের দিকে। লাজুক ছেলেটা হাসছে মিটিমিটি!
– কী সোহরাব? রফিকের গল্প সত্যি, না বানিয়ে বানিয়ে বলছে সে?
উত্তরে কিছুই বলে না সোহরাব। শুধু শুধু মিটিমিটি হাসতে থাকে লাজুক ছেলেটা!

জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি আকাশে ঘনকালো মেঘ। যেকোনো সময় ঝমঝমিয়ে নামবে বৃষ্টি। হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছে হয় আমার। আমি কিছু বলার আগেই সোহরাব বলে, ‘ছাদে যাবেন না-কি জাহিদ ভাই? চলেন বৃষ্টি দেখি।’
– চলো, বৃষ্টি দেখি!
যেতে যেতে জানতে চাই, ‘তোমার স্ত্রীর নাম কি বৃষ্টি?’
লাজুক হেসে, প্রায় শোনা যায় না এমন ভঙ্গিতে সোহরাব বলে, ‘জ্বি ভাই।’

ততক্ষণে আমরা পৌঁছে গেছি ছাদে। চিলেকোঠায় দাঁড়িয়ে দেখতে পাই আকাশ ভেঙে নেমেছে এসেছে আষাঢ়ের বৃষ্টি। এই সময় খুব চায়ের তৃষ্ণা পায় আমার


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!
Bengali Bengali English English Russian Russian
error: Content is protected !!