কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাওয়াকে কেন্দ্র করে শিপলু রহমান সাকিব নামে এক ছাত্রকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এক আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দুপুরের দিকে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম এ রায় দেন।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাদুগড় এলাকার টিএন্ডটি পাড়ার শেখ জহিরুল হকের ছেলে শেখ সরোয়ার তুহিন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৫ আগস্ট রাতে শিপলু রহমান সাকিবের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে আসামি। হত্যাকাণ্ডের পর দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বিল বোয়ালিয়া ও কিশোরীনগর বিলের মাঝখানে ফেলে রাখে। পর দিন ২৬ আগস্ট সকালে দৌলতপুর থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। একইদিন দুপুরে দৌলতপুর থানার একটি হত্যা মামলা করা হয়।
আরো জানা গেছে, নিহত শিপলু রহমান সাকিব নওগা জেলার আত্রাই উপজেলার ইসলামগাথি এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য সে রাজশাহীর একটি মেসে ওঠে। সেখানে আসামি তুহিনের সঙ্গে তার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। আসামি তুহিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দেবে বলে শিবলুর কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু সে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ করে দিতে ব্যর্থ হয়। পরে অভিনব কৌশলে শিপলুর কাছ থেকে পুনরায় আরো চার লাখ টাকা নেয় অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে। প্লেন ভাড়া এবং অন্যান্য খরচের জন্য এক লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে শিবলুকে ভেড়ামারা রেলওয়ে স্টেশনে আসতে বলেন আসামি তুহিন। আসামির কথামতো শিবলু ভেড়ামারা রেলওয়ে স্টেশনে গেলে তাকে সঙ্গে নিয়ে দৌলতপুর উপজেলায় যায়। এবং রাতে শিপলুকে গুলি করে হত্যা করে বিল বোয়ালিয়া ও কিশোরীনগর বিলের মাঝখানে ফেলে রাখে। আসামি ২৩ হাজার টাকা দিয়ে পিস্তলটি ভেড়ামারা এলাকা থেকে ক্রয় করে।
মামলার তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ হরেন্দ্র নাথ সরকার আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ মামলায় ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালত এ রায় দেন।
এদিকে শিপলুর স্বজনরা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তার স্বজনরা বলেন, শিপলুকে গুলি করে হত্যা করে আসামি তুহিন। দশ বছর আদালতে মামলার কার্যক্রম শেষে আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ রায়ে আমরা খুবই খুশি।
আদালতের পিপি অনুপ কুমার নন্দী বলেন, হত্যা মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আসামি তুহিনকে আমৃ্ত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।