পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারীর আলোচিত সেই ৩৭ কৃষকের ঋণ খেলাপীর মামলার বিষয়ে সরজমিনে তদন্ত করেছে সমবায় ও ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-পরিদর্শন) আহসানুল গণির নেতৃত্বে উপব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও আইন) আব্দুর রাজ্জাক ও সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রকল্প ঋণ) আমিনুল ইসলাম রাজীব ভাড়ইমারীতে গিয়ে তদন্ত করেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বললেও সেখানে উপস্থিত ছিলো না ভুক্তভোগী ঐ সকল কৃষকের অনেকেই। তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, আজ সরজমিনে তদন্তে আসার বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষকদের আগেই অবগত করেছেন তারা, কিন্তু তারপরও বেশিরভাগ কৃষকই কাজের অযুহাত দিয়ে বাড়িতে থাকেন নি।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ২০১৬ সালে ৪০ জন কৃষককে দলগত ভাবে এ ঋণ প্রদান করা হয়েছিলো। যার মধ্যে ৩ জন কৃষক সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি ৩৭ জন কৃষকের ঋণের টাকা ও এর মধ্যে অনেকেরই লভ্যাংশ পরিশোধ না করায় মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
কৃষক সমবায় সমিতির সভাপতি বিলকিস নাহার জানান, গ্রেপ্তারকৃত ১২ কৃষকের মধ্যে আতিয়ার রহমান নামে এক কৃষক ২০১৬ সালে ৪০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহন করেন। তিনি সুদ সহ ৪৯ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও ৪৩৩ টাকা বকেয়া থাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। যা কৃষকদের জন্য একটি লজ্জার বিষয়।
তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, হাতে গোনা কয়েকজন কৃষক আসল টাকা পরিশোধ করেছে, কিন্তু তাদের ৭ বছরের সুদ বকেয়া রয়েছে। বেশিরভাগ কৃষকই মুল টাকাই ফেরত দেন নি। ৩৭ জনের মধ্যে ১০ জন কৃষক মুল টাকা ফেরত দিলেও বিভিন্ন অংকের সুদ ফেরত দেন নি। আর বাকি ২৭ জন কৃষক মুল টাকা এবং সুদ কোনটায় সম্পূর্ণ ফেরত দেন নি। পল্লী প্রকল্প ঋণ গ্রহীতা সদস্যদের সঙ্গে ঋণ প্রদান, আদায় ও পরিশোধসংক্রান্ত প্রমাণপত্রের তথ্য পর্যালোচনা করে ঢাকায় গিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন বলেও জানান তারা।
তবে কৃষকদের অভিযোগ গ্রেপ্তারের আগে মামলার বিষয়ে বাদী পক্ষের কোনো নোটিশ পায়নি তারা। মামলার বিষয়ে আত্মসমর্পণের সুযোগ থাকার উচিত ছিলো বলে মনে করেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
এদিকে কয়েক দফায় ঋণের কিস্তি কৃষক সংগঠনের সভাপতি সম্পাদক ও ব্যাংকের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা হাতে টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন একাধিক কৃষক। তাহলে সেই টাকা জমা হয় নি কেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। সুষ্ঠ তদন্তে সত্য ঘটনা উঠে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
প্রসঙ্গত, ঋণ খেলাপীর মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় ২৪ নভেম্বর দিবাগত রাতে ঐ কৃষকদের মধ্যে ১২ কৃষককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।